সময়ানুবর্তিতা রচনা টি ৭ টি পয়েন্ট ও ৯০০ শব্দ দিয়ে বানানো। এতে কোনো অযথা পয়েন্ট ও লাইন যোগ করা হয়নি, যা সকল পরীক্ষায় ভালো নাম্বার পেতে সাহায্য করবে।
Table of Contents
ভূমিকা : মর্ত্যের মানুষের চিরন্তন বাণীহারা কান্না "নাই নাই, নাই যে সময়" অনন্ত প্রসারিত সময়ের যাত্রা পথ। পৃথিবীর ‘পথিক' মানুষ সময়ের সেই পথরেখা ধরে অগ্রসর হয়। সময়ের মতো মানবজীবন যদি অন্তহীন হতো, তাহলে দুঃখ থাকত না মানুষের। সময় নিরবধি, কিন্তু মানবজীবন সংক্ষিপ্ত । এখানেই গরমিল। মানুষ চায় তার সংক্ষিপ্ত জীবনায়তনের মধ্যে বহুতর কর্মের উদযাপন। কিন্তু সময় তা মঞ্জুর করে না।
কর্ম উদযাপনের আগেই তার বিদায়ের ডাক এসে পড়ে। মানুষের কাছে সময় তাই অমূল্য ধন। সময় চলে যায় নদীর স্রোতের মতো। চিরন্তন প্রবহমানতাই তার মূল বৈশিষ্ট্য। মুহূর্তের জন্যও কোথাও সে স্থির থাকে না, কারো জন্য অপেক্ষা করে না। মানুষের জীবনও সময়ের সেই অনন্ত ছন্দে সুর বেধেছে। সময়ের অন্তহীন প্রবাহে সে ছুটে চলেছে জন্ম থেকে মৃত্যুর অভিমুখে ।
সময়ের এই অস্থির ধাবমানতার জন্যই জীবন মানুষের কাছে পরম মূল্যবান। সময় অনন্ত, কিন্তু জীবন সীমাবদ্ধ। তার এক প্রান্তে জন্ম, অন্য প্রান্তে মৃত্যু ৷ এই জন্ম ও মৃত্যুর শাসনে জীবন সদা সঙ্কুচিত। মানুষ চায় সময়ের অন্তহীনতার মতো অন্তহীন জীবন; কিন্তু পায় না। মানবজীবনের চরম ট্র্যাজেডি এখানেই । জীবন যা শুধু ঘণ্টা আর মিনিটের সমাহার মাত্র। জীবনের এই সীমাবদ্ধতার জন্যই সময় এত আদরের, এত মূল্যবান। সময় অনন্ত, কিন্তু জীবন তার অতি সামান্য ভগ্নাংশ মাত্র। জীবন থেকে যে সময় একবার চলে যায় তা আর ফিরে পাওয়া যায় না। সময়ের গুরুত্ব প্রকাশ করতে গিয়ে রবার্ট ব্রাউনিং বলেছেন, “একটা দিন চলে যাওয়া মানে জীবন থেকে একটা দিন ঝরে যাওয়া।” তাই সময়ানুবর্তিতার গুরুত্ব সম্পর্কে যথার্থ সচেতন থাকা প্রয়োজন। সময় জীবনকে গঠনের যে সুযোগ দেয়, তাকে কাজে লাগালেই সাফল্য অনিবার্য হয়ে ওঠে। সময়কে যারা অবহেলা করে, সময়ের মূল্যবোধ সম্পর্কে যারা সচেতন নয়, তারা কখনোই সুখের সন্ধান পায় না। সুতরাং মানবজীবনে সময়ানুবর্তিতার গুরুত্ব অপরিসীম।
জীবনের এই সীমাবদ্ধ অবসরে দুর্লভ সময়ের যে ভগ্নাংশটুকু পাওয়া যায়, তার সদ্ব্যবহারের মাধ্যমেই জীবন সার্থক এবং সুখময় হয়ে ওঠে। কাজেই জীবনের সংক্ষিপ্ত সীমায়তনের মধ্যে যে পরম মূল্যবান সময় আমরা হাতে পাই, সেই দুর্লভ সময় যদি অবহেলা করে, আলস্যভরে কাটিয়ে দেই, তাহলে তা হবে সময়ের নির্বোধ অপচয় মাত্র। সেই অপচয়ের পরিণাম আমাদের জীবনে একদিন মর্মান্তিক দুঃখ আর অনুশোচনা নিয়ে আসবে। তখন বুকফাটা আর্তনাদ কিংবা এক সমুদ্র অশ্ৰুবর্ষণে কিংবা অনুতাপে দগ্ধ হলেও সেই আলস্যে অতিবাহিত সময় আর ফিরে পাওয়া যাবে না। প্রবাদে আছে—
“সময় কারো হাতধরা নয়
সময় হয় জলের মতন।”
প্রকৃতপক্ষে, সময়ের যথার্থ মূল্যবোধই জীবনের সাফল্য অর্জনের সোপান । সময়ের মূল্যবোধ হলো, যে সময়ের যে কাজ, সেই সময়ে সম্পাদন করা। যে তা করে না, সে করে সময়ের অমর্যাদা এবং পরাজয়ই হয় তার জীবনের চরম পরিণতি। সময়ের এই অবহেলার জন্য ভবিষ্যতে তাকে অনুশোচনা করতে হবে। যে কৃষক ফসলের ঋতুতে ফসলের বীজ বপন না করে আলস্যে সময় অতিবাহিত করে, সে কীভাবে ফসল ওঠার সময় খামার পূর্ণ ফসল আশা করতে পারে? সময় চলে গেলে তখন আর কান্নাকাটি করেও লাভ হয় না। প্রবাদে আছে—
“সময়ে না দেয় চাষ
তার দুঃখ বার মাস।”
মানবজীবনেও সেই একই কথা। জীবনে যখন শক্তি থাকে, সামর্থ্য থাকে, তখন আলস্যে অযথা কালহরণ করে জীবন কাটালে শেষ বয়সে অবশ্যই দুঃখ ভোগ করতে হয়। তাই সময়ের মূল্যবোধের গুরুত্ব অনেক ।
সময়ের মূল্যবোধের অভাবের পিছনে আছে মানুষের নিরাসক্ত জীবনবোধ, আলস্য, উদাসীনতা এবং অদৃশ্য সময়ের নিঃশব্দ অনন্ত যাত্রা। সময়কে চোখে দেখা যায় না, তার অনন্ত যাত্রার ঘণ্টাধ্বনিও শোনা যায় না। মানুষ তাই মনে করে, সময়ও বুঝি তার আলস্যের অনড় পাথরের মতো স্থির হয়ে আছে। তাই সময় পৃথিবীর অলস, কর্মবিমুখ মানুষদের ফাঁকি দিয়ে তার অনাদি যাত্রাপথে প্রস্থান করে। কিন্তু সময় পৃথিবীর সেই অলস, কর্মবিমুখদের আলস্য এবং কর্মবিমুখতাকে ক্ষমা করে না। সে তাদের কপালে দুঃখময় ভবিষ্যতের অভিশাপ এঁকে দিয়ে প্রস্থান করে। কিন্তু জীবনের সঙ্গে বা সময়ের সঙ্গে যারা প্রবঞ্চনা করে না, সময়ও তাদের সঙ্গে প্রবঞ্চনা না করে তাদের জন্য আশীর্বাদ বর্ষণ করে যায়। প্রকৃত অর্থে বাঁচতে জানে তারাই। জীবন এবং সময় অমূল্য, সময়ের অপব্যবহারের অর্থ যেমন অপচয়, দুর্লভ মানবজন্মও তেমনি অপচয়ের জন্য নয় ।
শৈশবই কর্মজীবনে প্রবেশের তোরণ দ্বার। এই সময়ই জীবনের প্রস্তুতির কাল। ভবিষ্যৎ কর্মজীবনের সকল দায়িত্বভার বহনের যোগ্যতা এই সময়েই অর্জন করতে হয়। শৈশব কালের প্রতিটি মুহূর্তকে যথাযথভাবে ব্যবহার করলে এবং অমূল্য সময়ের অপচয় না করে তার প্রতিটি দুর্লভ মুহূর্তকে জীবনক্ষেত্রে প্রয়োগ করলে পরবর্তীকালে সুখ ও শান্তি দুই-ই পাওয়া যাবে। শৈশবেই আমাদের উপলব্ধি করতে হবে যে, জীবন মূল্যবান এবং তার অন্তর্ভুক্ত সময় অত্যন্ত সীমিত ও অমূল্য। সেই অমূল্য সম্পদ আছে আমাদের সকলের অধিকারে, সকলের হাতের মুঠোয় । সৎ এবং মহৎ কাজে লাগাতে পারলেই হবে তার পরম সদ্ব্যবহার। কর্মই সময়ের পরিমাপের একমাত্র মাপকাঠি। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কে কত মহৎ এবং মূল্যবান কাজ সম্পন্ন করতে পারে, তা দিয়েই তার সাফল্য বিবেচিত হয়। তাই জীবনে মানুষ কতদিন বেঁচেছে, তা বড় কথা নয়- সে জীবনে কত মহৎ কর্ম সম্পন্ন করেছে এবং সেসব কর্মানুষ্ঠানের ফলে মানবসমাজ কতখানি উপকৃত হয়েছে, তা-ই তার সাফল্যের পরিচায়ক। তাই আবাল্য অভ্যাসের দ্বারাই শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতি প্রয়োজন এবং তার দ্বারাই দুর্লভ সময়ের সদ্ব্যবহার আয়ত্ত করা সম্ভব। সেই অভ্যাসের দ্বারা, সেই প্রস্তুতির ফলে জীবনে আসে সময়ানুবর্তিতা। সময়ানুবর্তিতা জীবনে সাফল্য লাভের চাবিকাঠি এবং সময়ানুবর্তিতার মাধ্যমে কল্যাণপূত কর্মেই জীবনের চরম সার্থকতা । কবি বলেন,
“পরিশ্রম ধন আনে, কর্মে আনে সুখ,
আলস্যে দারিদ্র্য আনে, পাপে আনে দুঃখ।”
সময়ের অপচয় একটা বড় অপরাধ। যারা সময় নষ্ট করে তারা জীবনে উন্নতি করতে পারে না। সময়ের যথার্থ মূল্যবোধই ব্যক্তি এবং জাতীয় জীবনের সাফল্যের সোপান। যেহেতু সময় জীবনের সমস্ত সাফল্য ও সুখের উৎস, তাই প্রত্যেককে সময়ের মূল্য সম্বন্ধে সচেতন হওয়া এবং তার সদ্ব্যবহার করা উচিত। তবেই জাতি পাবে গতি, দেশ হবে সমৃদ্ধ, জীবন হবে আনন্দময় ।
সময়ানুবর্তিতা রচনা টি ভালো লেগে থাকলে এবং আপনার উপকারে আসলে কমেন্ট এ ধন্যবাদ লিখতে পারেন এবং রচনা টি শেয়ার করতে পারেন।
Detailsbd.com একটি মাল্টিনিশ বাংলা ব্লগ সাইট যেখানে মূলত ব্লগিং, ডিজিটাল মার্কেটিং, ব্যবসা, টেকনোলজি, ও পড়াশোনা রিলেটেড বিষয়বস্তু নিয়ে লেখা হয়। এটি শুরু করা হয় ২০১৮ সালের মে মাসের দিকে। এই সাইট টি আমার প্রথম ওয়েবসাইট তাই অনেক বাধা বিপত্তি সত্বেও আমি এই সাইটটিকে আমার কাছে রেখে দিয়েছি। আমার লেখা কোনো আর্টিকেল পড়ে যদি আপনাদের ভালো লাগে অথবা মন্দ লাগে তবে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।
ধন্যবাদ সবাইকে।