রসুনের উপকারিতা এর কথা তো অনেক আছে। প্রায় ৫ হাজার বছর ধরে মসলা, খাদ্য ও ওষুধ হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে রসুন। তবে অতিরিক্ত রসুন খাওয়ার রয়েছে কিছু অপকারিতাও, আসুন জেনে নিই।
বর্তমান তথ্য অনুযায়ী রসুনকে স্বাস্থ্যরক্ষা ও বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ম্যাজিকের মতো কাজ করে এক কোয়া রসুন। রসুনকে বলা হয় প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক। রসুনের মধ্যে রয়েছে নানা পুষ্টিগুণ। মানব দেহের বিভিন্ন উপকারে রসুন একান্ত প্রয়োজনীয়।
রসুন দুই প্রকার,
- বহুকোষী রসুন এর বোটানিক্যাল নাম Allium Sativum linn
- এককোষী রসুন এর বোটানিক্যাল নাম Allium Ampeloprasum linn.
রসুনে রয়েছে অ্যালিন নামক একটি পদার্থ, তাই রসুন চিবিয়ে খাওয়ার সময় সেটি সক্রিয় পদার্থ অ্যালিসিনে পরিণত হয়। অ্যালিসিনে সালফারের উপস্থিতিই রসুনের নির্দিষ্ট স্বাদ-গন্ধের কারণ।অ্যালিসিন সক্রিয় হওয়ার কারণেই এটি সালফারযুক্ত নানা সক্রিয় যৌগে পরিণত হয়। শ্বেত রক্তকণিকার শক্তি বাড়িয়ে দেয়।
প্রতিদিন রসুন খেলে সর্দি-কাশির সম্ভাবনা কমে। রসুনে উপস্থিত ভিটামিন গুলো হলো- থিয়ামিন (ভিটামিন বি১), রিবোফ্লাবিন (ভিটামিন বি২), নায়াসিন (ভিটামিন বি৩), প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড (ভিটামিন বি৫), ভিটামিন বি৬, ফোলেট (ভিটামিন বি৯), সেলেনিয়াম, এলিসিন।
এছাড়াও সেক্স পারফমেন্স এ রসুনের উপকারিতা সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন
রসুনের উপকারিতা
আসুন জেনে নিই রসুনের কিছু উপকারিতা
- রসুন একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক।
এটি শরীরের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াগুলো ধ্বংস করে ফেলে। রসুনের এই গুণ ভালো কাজ করে যদি প্রতিদিন সকালে নাশতার আগে খালি পেটে রসুন খাওয়া হয়।।
- রসুন কোলেস্টেরল কমিয়ে হার্ট অ্যাটাক ও উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমায়।
উচ্চ রক্তচাপে ভোগা রোগীদের জন্য ডাক্তাররা রসুন খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তাছাড়া এই মশলা জাতীয় খাদ্য উপাদানটি রক্তের সুগারও নিয়ন্ত্রণে রাখে।
- রসুন শরীরের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
অ্যাথলেটিক পারফরম্যান্স উন্নত করতে রসুন কার্যকরী ভূমিকা রাখে। তাছাড়া ঐতিহ্যগতভাবেই প্রাচীন সংস্কৃতিতে ক্লান্তি কমাতে এবং শ্রমিকদের কাজের ক্ষমতা বাড়াতে রসুন ব্যবহৃত হতো। জানা যায়, প্রাচীন গ্রিসের অলিম্পিক ক্রীড়াবিদদের দেহের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত রসুন দেওয়া হতো।
- রসুন পরিপাকতন্ত্রের সমস্যা দূর করে।
যকৃত ও মূত্রাশয়ের কার্যক্রম ঠিক রাখে, হজমশক্তি বাড়ায়, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং ক্ষুধামন্দা দূর করে। অনেক সময় স্ট্রেসের কারণে গ্যাস্ট্রিক দেখা দেয়। খালি পেটে রসুন খেলে স্নায়ুবিক চাপ কমে যায় এবং অ্যাসিডিটি হয় না।
- হাড়ের সুস্থতা ও মহিলাদের মেনোপজ সমস্যায় রসুন খুবই কার্যকর।
নিয়মিত রসুন সেবনে হাড়ের উন্নতি হয়। পক্ষান্তরে হাড় ক্ষয় রোধ করে। এছাড়া মহিলাদের ইস্ট্রোজেন হরমোন বাড়িয়ে হাড়ের ক্ষয় কমাতে পারে। এমনকি বৃদ্ধ বয়সে অস্টিওআর্থারাইটিস রোগ থেকে মুক্তি পেতে গুরুপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
- ফুসফুসের সংক্রমণ প্রতিরোধে রসুন খুবই কার্যকর।
কেননা ফুসফুসে বিভিন্ন ধরণের সংক্রমণ যেমন, অ্যালার্জি, ঠান্ডাজনিত সমস্যা কফ ও সর্দি-কাশি থেকে মুক্তি দেয়।
- শরীরে যেকোন পুঁজ ও ব্যথাযুক্ত ফোঁড়ায় রসুনের রস লাগালে আরাম পাওয়া যায়।
ক্ষতস্থানে রসুনের রস লাগিয়ে ১৫ মিনিট রেখে দিন। শুকিয়ে আসলে ধুয়ে ফেলুন। সেই সাথে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে রক্ত পরিষ্কারের জন্য। কাঠ বা বাঁশের ছোট টুকরা চামড়ায় বিঁধে গেলে তা আগে বের করে পরে ঐ জায়গায় রসুনের কোয়া কেটে লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করে রাখলে খুব তারাতাড়ি ভালো হয়ে যাবে।
- সেল ড্যামেজ রোধ করে ও ত্বককে মসৃণ রাখে।
রসুনে উপস্থিত অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট ‘সেল ড্যামেজ’ ও ‘এজিং’ রোধ করে। ব্রেনের সেল ড্যামেজ কম হয়ে আলঝেইমারস ও ডিমেনশিয়ার মতো রোগের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায় রসুন থেকে। এছাড়া ত্বকে বার্ধ্যকের ছাপ পড়তে দেয়না। এমনকি চেহারায় কোনো দাগ থাকলে কমে যায়।
- ক্যান্সার প্রতিরোধে রসুনের গুরুত্ব অপরিসীম।
বিশেষজ্ঞরা গবেষণা করে দেখেছেন ক্যান্সার আক্রান্ত ব্যক্তি যদি প্রতিদিন রসুন সেবন করেন, তাহলে পেট এবং কোলোরেক্টাল ক্যানসার প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। কারণ রসুন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে তোলে।
রসুনের অপকারিতা
রসুনের যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমনি এর কিছু অপকারিতাও রয়েছে। যেমন-
- অতিরিক্ত রসুন খাওয়ার ফলে মাথা ঘোরানোর মতো সমস্যা হতে পারে।
কারণ রসুন বেশি খাওয়ার ফলে কমে যেতে পারে রক্তচাপ। আর নিম্ন রক্তচাপের উপসর্গ হিসেবে দেখা দিতে পারে দুর্বলতা, মাথা ঘোরানো বমি বা বমিভাব।
- রসুনে রয়েছে সালফার, যা পেটে গ্যাস তৈরি করে। তাই খালি পেটে রসুন খেলে ডায়রিয়া হতে পারে।
- গবেষণায় জানা যায় যে, মাত্রাতিরিক্ত রসুন খাওয়ার ফলে রসুনে থাকা রাসায়নিক উপাদান অ্যালিসিন লিভারে বিষক্রিয়া তৈরি করতে পারে।
- যারা ওয়ারফারিন, অ্যাসপিরিন ইত্যাদি ওষুধ সেবন করেন, তাদের অতিরিক্ত রসুন খাওয়া উচিত নয়। এতে বিপরীতক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
- গর্ভবতী নারীদের কাঁচা রসুন খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। তাছাড়া যারা বাচ্চাকে দুধ খাওয়ান তাদেরও কাঁচা রসুন খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত, কারণ এতে দুধের স্বাদ পালটে যায়।
- রসুনে সালফার থাকার কারণে মুখে দুর্গন্ধ হয়।
- অতিরিক্ত রসুন খাওয়ার কারণে ‘হাইফিমা’ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অর্থাৎ ‘আইরিস’ ও ‘কর্নিয়া’র মাঝে রক্তক্ষরণ ঘটাতে পারে। ফলাফল হারাতে পারে দৃষ্টিশক্তি।
পরিশেষে
শেষ কথায় বলা যায়, রসুন যেমন স্বাস্থ্য বা সেক্সের জন্য ভালো তেমন এর ক্ষতিকর দিকগুলোও বেশ লক্ষণীয়। তাই রসুন খাওয়া দেহের জন্য ভালো কিনা তা বিবেচনা করে রসুন খাওয়া উচিত।