মাদকাসক্তি ও এর প্রতিকার রচনা টি ৯ টি পয়েন্ট ও ১০০০ শব্দ দিয়ে বানানো। এতে কোনো অযথা পয়েন্ট ও লাইন যোগ করা হয়নি, যা সকল পরীক্ষায় ফুল মার্কস পেতে সাহায্য করবে।
Table of Contents
ভূমিকা : বর্তমান সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিষবাষ্পের মতো ছড়িয়ে পড়েছে নেশার উপকরণ। নেশা সর্বনাশা জেনেও মানুষ এর প্রতি আসক্ত হয়। এর নীল দংশনে দংশিত হচ্ছে কোটি কোটি মানুষ। ড্রাগ বা মাদকাসক্তি অতি আধুনিক সভ্যতার ক্ষেত্রে এক নতুন অভিশাপ । নিজের প্রকৃতিকে বাইরের মাদকের দ্বারা অপ্রকৃতিস্থ করার প্রবণতা চিরকালই মানুষের মধ্যে ছিল। কিন্তু যেহেতু মানুষ প্রকৃতির দাস নয়, এই আসক্তির বিপরীত সংস্কারও মানুষের মধ্যে আছে। তাই মানুষ অতীতে মাদকদ্রব্যে আসক্ত হয়েও বহুক্ষেত্রে আবার তাকে পরিত্যাগ করে স্বাভাবিক হতে পেরেছে। আজো আমাদের এদিক থেকে সচেতন হতে হবে, ড্রাগের কবল থেকে রক্ষা করতে হবে এদেশের তরুণ সমাজকে।
মাদকের নেশা খুব দ্রুত মানুষকে আসক্ত করে, আর এই আসক্তির আকর্ষণশক্তি এত তীব্র যে, একবার যাকে স্পর্শ করে তার পক্ষে আবার পূর্বের সহজ জীবনে ফিরে আসা দুষ্কর। নারকোটিক ড্রাগ একজাতীয় মাদকদ্রব্য। হেরোইন, ব্রাউনসুগার, এল-এস-ডি, স্ম্যাক ইত্যাদি নানা রকম এর নাম। মানুষের নেশার জন্য রয়েছে আরও অনেক ড্রাগ। যেমন : গাঁজা, আফিম, চরস, ভাং, প্যাথেড্রিন, মরফিন, হাসিস, কোকেন ইত্যাদি ছাড়াও রয়েছে নানা রকম ঘুমের ট্যাবলেট। অধুনা আকাড়া কোকেনের সঙ্গে তামাক মিশিয়ে তৈরি করা হচ্ছে নতুন ধরনের মাদকদ্রব্য ৷ এ নতুন ড্রাগ ‘বাজুকো' নামে ইউরোপের বাজারগুলোতে এখন বেশ জমজমাট। গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গল, গোল্ডেন ক্রিসেন্ট, গোল্ডেন ওয়েজ হেরোইনের মূল উৎস আফিম। আর আফিম পাওয়া যায় পপি উৎপাদনের মাধ্যমে।
মাদকের উৎস বিদেশের নানান দেশে। আমেরিকা মহাদেশের কলম্বিয়া, বলিভিয়া, লাতিন আমেরিকায় নারকোটিক ড্রাগ তৈরির বিশাল বিশাল চক্র আছে। আমাজানের অববাহিকার গভীর জঙ্গলে 'ল্যান্ড অব ট্যাঙ্ককোয়েলিটি' নামক অঞ্চলে নারকোটিক ড্রাগ শিল্পের বেআইনি শহরটির কথা প্রসঙ্গত স্মরণ করা যায়।
এশিয়ার তিনটি এলাকায় প্রধানত পপি উৎপাদিত হয়। এলাকা তিনটি হলো— গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গল, গোল্ডেন ক্রিসেন্ট ও গোল্ডেন ওয়েজ । কর্কটক্রান্তির উত্তর ১৮° থেকে ২৪° দ্রাঘিমাংশের মধ্যে গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গল অবস্থিত। এর পরিধি থাইল্যান্ড, লাওস ও বার্মা। পপি উৎপাদনকারী গোল্ডেন ক্রিসেন্টের বিস্তৃতি পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরান, তুরস্ক জুড়ে। এর মধ্যে সিংহভাগ উৎপন্ন হয় পাকিস্তানে। গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গল ও গোল্ডেন ক্রিসেন্টের মধ্যবর্তী অপর একটি নতুন অঞ্চল গোল্ডেন ওয়েজ। এ অঞ্চলটি ভারত এবং নেপাল সীমান্তে। প্রাপ্ত তথ্য মতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কলম্বিয়া, বলিভিয়া, গুয়েতেমালা, জ্যামাইকা, ব্রাজিল, প্যারাগুয়ে, ঘানা, নাইজেরিয়া, কেনিয়া, দক্ষিণ আমেরিকা, পেরু কোকেন উৎপাদনকারী উল্লেখযোগ্য দেশ। মেক্সিকো, যুগোশ্লাভিয়া, হাঙ্গেরীর সীমান্ত প্রদেশ সাইপ্রাস, ইরান, আফগানিস্তান, ভারত, বার্মা, থাইল্যান্ড, নাওস ও অস্ট্রেলিয়ায় আফিম এবং হেরোইন উৎপন্ন হয় । হাসিস উৎপাদনের ক্ষেত্রে জ্যামাইকা, মরক্কো, জর্ডান, ভারত, নেপাল ও পাকিস্তান সমধিক পরিচিত।
পৃথিবীর শতাধিক দেশের ৫০ থেকে ৬০ কোটি মানুষ মাদকে আসক্ত বলে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার এক রিপোর্টে প্রকাশ করা হয়েছে। ৩৬টি দেশে অধিক ক্ষতিকর মাদক উৎপাদন করা হলেও এর স্থানান্তরের প্রক্রিয়া শতাধিক দেশকে মাদকের লীলা ক্ষেত্রে পরিণত করেছে। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক এক সরকারি জরিপে জানা গেছে যে, সমগ্র দেশে ১৭ লাখ মানুষ মাদকাসক্ত। কিন্তু চিকিৎসকদের মতে, বর্তমানে দেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা ৫০ লাখেরও বেশি। প্যাথেড্রিন আসক্তদের মধ্যে বেশি হচ্ছে মহিলার সংখ্যা।
ড্রাগের উৎপাদন বাড়ছে দ্রুত গতিতে। এবার তো বাজার দরকার। এই বাজারের অন্যতম হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশকে। স্বাধীনতার কয়েক বছর পর থেকে বাংলাদেশে এই নেশা ব্যাপকভাবে ছড়াতে শুরু করেছিল। গাজা, চরস, হাসিস, হেরোইন, কোকেন, হেম্প, ব্রাউনসুগার, ওপিয়াম ডেরিভেটিস ইত্যাদি মাদকদ্রব্যে ছেয়ে গেছে দেশ। গ্রাম হেরোইন বা ব্রাউনসুগার দু থেকে তিনবার ব্যবহার করলে সে ব্যক্তি আর এ নেশা থেকে নিজেকে সহজে মুক্ত করতে পারে না। কৌতূহলের বশবর্তী হয়েও যারা এ নেশার কবলে একবার প্রবেশ করেছে, তারা হয়েছে নরকের কারাগারে বন্দী।
বেকারত্ব, হতাশা, বন্ধুবান্ধবের প্ররোচনায় কৌতূহল মেটাতেও মানুষ দুএকবার মাদক সেবন করতে গিয়ে আর বেরিয়ে আসতে পারে নি তার যাদুস্পর্শ থেকে। কোথাও কোনো মানসিক আঘাত পেলে সাময়িকভাবে ভুলে থাকার জন্যও মানুষ মাদক সেবন করে, কিন্তু পরে তা নেশায় পরিণত হয়। তাছাড়া চিরন্তন নতুনত্বের নেশা, নতুন অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের দুর্নিবার আকর্ষণ এবং সাময়িক ভালোলাগার বশবর্তী হয়েও অনেকে আসক্ত হয়। দেশের বিশেষ সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থায় কেউ কেউ নিজের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে না পেরে হতাশায় ভোগে এবং তা থেকে আসক্ত হতে শুরু করে। মাদকাসক্ত লোকসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য আন্তর্জাতিক মাদক ব্যবসায়ীরাও দূর থেকে কাজ করে থাকে।
মাদকাসক্ত হবার পরিণতি খুবই ভয়াবহ। ড্রাগে অভ্যস্ত ব্যক্তিদের আচার আচরণের মধ্যে একটা খাপছাড়া ভাব পরিলক্ষিত হয়। চেহারাও হয়ে যায় রুক্ষ। খিদে না পাওয়া এবং দ্রুত ওজন হ্রাস এ আসক্তির প্রাথমিক লক্ষণ। দেখা যায়, তারা যখন তখন নিজের ঘরে ফিরে আসছে। সেই সঙ্গে বইপত্র, খাতা-কলম ও অন্যান্য দ্রব্য হারিয়ে ফেলা, পায়খানা বা বাথরুমে বেশি সময় কাটানো, চোখের তারা ছোট হয়ে যাওয়া, এমন কি চুরির অভ্যাসও দেখা যায়। এ সময় থেকেই অভিভাবকদের সাবধান হওয়া উচিত। চিকিৎসকদের মতে, এ ভালোলাগা থেকেই ধীরে ধীরে স্নায়ু অসাড় হয়ে যায়, কর্মক্ষমতা লোপ পায় এবং ক্রমে ক্রমে মৃত্যুর ঘণ্টাধ্বনি বেজে ওঠে জীবনে ।
আমাদের তরুণ সমাজই মাদকাসক্তির কবলে আক্রান্ত হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। এ থেকে তাদেরকে রক্ষা করতে না পারলে জাতির জন্য তা অভিশাপ হয়ে থাকবে। এর ক্ষতিকর দিক বিবেচনা করে বিশ্ব জুড়ে তা প্রতিরোধ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মাদকদ্রব্যের উৎপাদন, আমদানি, বিক্রয় ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করে বিশ্বের সকল দেশে আইন তৈরি করা হয়েছে। শুধু মাদকাসক্তির কুফলের কথা প্রচার করে বা উপদেশ দিয়ে এ ভয়ংকর ব্যাধির প্রতিকার করা যাবে না। এর হাত থেকে রক্ষার জন্য কঠোর আইন যেমন প্রয়োজন, তেমনি পারিবারিক ও সামাজিকভাবে প্রতিকার করতে হবে।
নেশামত্ত ব্যক্তিদের সমাজে ফিরিয়ে আনতে হবে এবং চলমান সুস্থ জীবনের সঙ্গে তাদের মেলাতে হবে। এর জন্য মাদকাসক্ত রোগীদের উপযুক্ত চিকিৎসা প্রয়োজন। সে সাথে প্রয়োজন রক্ষণাবেক্ষণ। প্রথম পর্যায়ে এসব রোগীদের সতর্কভাবে রাখতে হবে, দরকার হলে বেঁধে রাখতে হবে, যেন এরা নেশার দুর্নিবার আকর্ষণে ছিটকে বেরিয়ে আসতে না পারে। নেশা ছাড়ার সময় এরা নেশার বস্তুর জন্য উন্মাদপ্রায় হয়ে যায়। তারপর এদের দিতে হবে মরফিন ইনজেকশন যা ব্যথা কমায় ও সুখ আনে। উপযুক্ত ঔষধ প্রয়োগ করতে হবে যেন শারীরিক ক্রিয়াগুলো যথাযথ সম্পন্ন হয়। আত্মবিশ্লেষণের জন্য নির্জন বাসও এদের কখনো কখনো দরকার। তখন সাইকোলজিক্যাল ট্রিটমেন্ট বা মানসিক চিকিৎসার প্রয়োজন। এরপর রোগীদের জন্য প্রয়োজন পুনর্বাসন।
মাদকাসক্তির ভয়াবহ দাবানল আমাদের তরুণ সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে। মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের রোগ নিরাময়ের দায়িত্ব সকলকে গ্রহণ করতে হবে। প্রধান দায়িত্ব হলো প্রশাসনের। তারা দৃঢ় হাতে হাল না ধরলে সামাজিক অপকর্মসমূহ রোধ করা যাবে না। মাদক ব্যবসায়ে দুষ্কৃতদের কঠিন শাস্তি দেওয়ার দায়িত্ব সরকারের। কিন্তু সাধারণ মানুষ যদি এ সমস্যা সমাধানে এগিয়ে না আসে, সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে না দেয়, তবে এই কদর্য ব্যাধির অপসারণ সম্ভব নয়। তাই দেশের সর্বস্তরের মানুষকে মাদকাসক্তির সর্বনাশা অভিশাপ সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।
মাদকাসক্তি ও এর প্রতিকার রচনা টি ভালো লেগে থাকলে এবং আপনার উপকারে আসলে কমেন্ট এ ধন্যবাদ লিখতে পারেন এবং রচনা টি শেয়ার করতে পারেন।
Detailsbd.com একটি মাল্টিনিশ বাংলা ব্লগ সাইট যেখানে মূলত ব্লগিং, ডিজিটাল মার্কেটিং, ব্যবসা, টেকনোলজি, ও পড়াশোনা রিলেটেড বিষয়বস্তু নিয়ে লেখা হয়। এটি শুরু করা হয় ২০১৮ সালের মে মাসের দিকে। এই সাইট টি আমার প্রথম ওয়েবসাইট তাই অনেক বাধা বিপত্তি সত্বেও আমি এই সাইটটিকে আমার কাছে রেখে দিয়েছি। আমার লেখা কোনো আর্টিকেল পড়ে যদি আপনাদের ভালো লাগে অথবা মন্দ লাগে তবে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।
ধন্যবাদ সবাইকে।