ডিম খাদ্য উপযোগী ও পুষ্টিকর একটি খাবার। পৃথিবীতে যত রকমের ডিম রয়েছে তার মধ্যে কোয়েল পাখির ডিম পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি ডিম। তবে ৪০ বছর পেরিয়ে গেলে ডিম পরিহার করতে বলা হয়ে থাকে। কারণ ব্রয়লারের ডিম খেলে কোলেস্ট্রল বাড়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু কোয়েল পাখির ডিম যে কোন বয়সের মানুষ সহজেই খেতে পারবেন। এতে কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই বরং বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্ত করবে। আজকে এই আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করব কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা এবং অপকারিতা ও ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে।
কোয়েল পাখির ডিমের অনেক অনেক উপকারিতা রয়েছে কিছু অপকারিতার রয়েছে। এখন আমরা কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা সম্পর্কে জানব-
চাইনিজরা কোয়েল পাখির ডিমকে বিভিন্ন রোগের নিরাময় হিসেবে ব্যবহার করে ও গ্রহণ করে। যেমন অ্যাজমা, ডায়াবেটিস, টিবি ইত্যাদি। কোয়েল পাখির ডিম খাওয়ার মাধ্যমে লিভার কিডনি সুস্থ থাকে এছাড়াও অনেক সময় পিত্তথলিতে পাথর হলে তা বলতেও এই পাখি ডিম সাহায্য করে। গবেষণা থেকে জানা গেছে যে কোয়েল পাখির ডিম খেলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। তাই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে চাইলে এবং শরীরকে সুস্থ রাখতে চাইলে নিয়মিত কোয়েল পাখির ডিম খেতে পারেন।
যেকোনো বয়সের লোকেরা কোয়েল পাখির ডিম খেতে পারবেন কোন সমস্যা হবে না। তবে বাচ্চাদের জন্য কোয়েল পাখির ডিম খুব বেশি উপকারী।কোয়েল পাখির ডিম শিশুদের স্মরণশক্তি বাড়াবে এতে করে তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঘটবে। বর্তমানে আমরা দেখি যে শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য বিভিন্ন রকমের ঔষধ খাওয়ানো হয় যা একজন শিশুর জন্য উপকার হতে পারে না। তাই সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবে শিশুর মানসিক ও শারীরিক বিকাশের জন্য কোয়েল পাখির ডিম নিয়মিত খাওয়ান। এতে শরীরের কোন প্রকার ক্ষতিও হবে না আবার সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হবে। এক্ষেত্রে প্রতিদিন শিশুদের দুই থেকে তিনটি কোয়েল পাখির ডিম খাওয়ালেই চলবে। কোয়েল পাখির ডিমে উপকারিতা অনেক বেশি পরিমানে রয়েছে।
একটি নির্দিষ্ট সময় বা বছরে অন্তত দু থেকে তিনবার সর্দি জ্বর বা এলার্জি সমস্যা হয়ে থাকে। এলার্জি সমস্যা প্রতিহত করতে কোয়েল পাখির ডিম অনেক বেশি উপকারী । কারন এই ডিমে রয়েছে এলার্জি প্রতিরোধক উপাদান।
কোয়েলের ডিমে ভিটামিন এ রয়েছে যার চোখের সমস্যা দূর করতে বা রাত কানার সমস্যা দূরীকরণে সহায়তা করে। অপরদিকে ডিমের সাদা অংশে রয়েছে লাইসিন ৮ নামে অ্যামিনো এসিড যেটি ত্বকে কোলাজেন ঘটাতে সহায়তা করে। এছাড়াও কোয়েলের ডিমে রয়েছে কোলিন নামক পুষ্টি উপকরণ যা বয়স কমিয়ে দেয়।
কোয়েল পাখির ডিমের রয়েছে খনিজ উপাদানগুলোর একটি হলো সেলিনিয়াম। এই খনিজ দ্রব্যটি প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। সেলিনিয়ামের রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যেটি দেহকোষকে ক্ষয় হয়ে যাওয়া ও জারণ হতে রক্ষা করে। সে ক্ষেত্রে কোয়েলের পাখির ডিমে উপকারিতা এমন রয়েছে যা ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।
ত্বক ও চুলের যত্নে একটু এক্সট্রা কেয়ার নিতে হয়। বিশেষ করে কিশোর বয়সে ছেলে মেয়ে উভয় ত্বক নিয়ে তখনই বেশি সচেতন থাকে।
কোয়েল পাখির ডিমে ভিটামিন বি রয়েছে যা চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়াবে এবং লোহিত রক্তকণিকা উৎপন্ন করে যেটি আমাদের চুল ও ত্বকের জন্য খুবই উপকারী।
কোয়েল পাখির ডিমে রয়েছে এমিনো এসিড যা নতুন টিস্যু উৎপন্ন করে, টিস্যুর ক্ষয় রোধ করে থাকে এছাড়াও ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং আয়রনের অভাব পূরণ হয় যার ফলে রক্তস্বল্পতা দূর হয়। এই ডিম আমাদের শরীরের শক্তির উৎস ও শরীরের শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। যারা রক্তস্বল্পতায় ভুগছেন তারা নিয়মিত অন্তত তিনটি করে কোয়েল পাখির ডিম খেলে রক্তস্বল্পতার সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
নিয়মিত কোয়েল পাখির ডিম খাওয়ার ফলে শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। আর শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে এবং অন্যান্য রোগ সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে। তাই যদি শরীরে অ্যান্টি বডি তৈরি করতে চান তবে নিয়মিত কোয়েল পাখির ডিম খান।
কোয়েল পাখির ডিমে রয়েছে ভিটামিন, প্রোটিন, এনজাইম, মিনারেল এসিড। শরীরের সব রকমের পুষ্টির অভাব পূরণে এই ডিমের ভূমিকা বলে শেষ হবে না। কোয়েল পাখির ডিম শরীরের কর্মদক্ষতা বাড়াতে সহায়তা করে। বিশেষ করে অনেকেই আছেন যারা অল্প কাজ করতে গিয়েই হাপিয়ে ওঠেন কোয়েল পাখির ডিম তাদের জন্য খুব প্রয়োজন। কেননা নিয়মিত কোয়েল পাখির ডিম যদি আপনি খান তাহলে আপনার কর্মদক্ষতা অনেক বৃদ্ধি পাবে।
কোয়েল পাখির ডিমে অন্যান্য পাখিদের ডিমের মতোই বিভিন্ন ভিটামিন রয়েছে। তবে কোয়েল পাখির ডিমে মুরগির ডিমের থেকে ছয়গুণ বেশি রয়েছে ভিটামিন বি-১, পাঁচ গুণ বেশি রয়েছে ফসফরাস ও আয়রন এবং ১৫ গুণ বেশি রয়েছে ভিটামিন বি-২। দেখা যায় ছয় গুন বেশি ভিটামিন রয়েছে মুরগির ডিমের তুলনায়।
এজন্য যদি আপনি নিয়মিত ভিটামিন খাওয়ার পরিবর্তে পাখির ডিম খান তবে আপনার ভিটামিনের চাহিদা পরিপূর্ণভাবে পূরণ হয়ে যাবে। তাই সবচেয়ে ভালো হয় ভিটামিন ওষুধ গ্রহণ না করে প্রাকৃতিকভাবে কোয়েল পাখির ডিম খাওয়া বেশি উত্তম। কেননা এই ডিম খেলে কোনরকম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া শরীরে থাকবে না এছাড়াও বাড়তি ভিটামিনের যোগান দেবে এতে শরীরের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। তাই ভিটামিন পেতে চাইলে আপনি আজ থেকে কোয়েল পাখির ডিম নিয়মিত খেতে পারেন।
কোয়েল পাখির ডিমের বেশিরভাগ উপকার রয়েছে তবে কোয়েল পাখির ডিমের অপকারিতা কিছু রয়েছে। নিচে সেগুলি আলোচনা করা হলো-
যারা ডায়াবেটিসের হৃদরোগের আক্রান্ত এবং নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকে সেক্ষেত্রে কোয়েল পাখির ডিম এড়িয়ে চলাই ভালো কেননা এতে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাট রয়েছে যা হৃদরোগী ও ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সমস্যা হতে পারে।
কোয়েল পাখির ১০০ গ্রাম ডিমে রয়েছে কোলেস্টেরল ৮৪৪ গ্রাম যা অন্যান্য ডিম থেকে অনেক বেশি। তাই যাদের কোলেস্টেরলের মাত্রা অনেক বেশি রয়েছে তারা অবশ্যই এই ডিম খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন।
পরিশেষে বলা যায় যে আজকের এই আর্টিকেলে আমরা কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে সঠিক তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করেছি। কোয়েল পাখির ডিমের কিছু অপকার থাকলেও এতে অনেক বেশি উপকারিতা পাওয়া যাবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে কেননা প্রতিটি জিনিসের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। অতিরিক্ত কোন কিছুই উপকার বয়ে আনবে না। সঠিক উপকার পেতে চাইলে নিয়মিত নির্দিষ্ট পরিমাণে কোয়েল পাখির ডিম খেতে হবে। এতে সার্বিক পুষ্টিগুণ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রক্তস্বল্পতার সমস্যা দূর হবে এবং কার্যক্ষমতা বাড়বে।
Detailsbd.com একটি মাল্টিনিশ বাংলা ব্লগ সাইট যেখানে মূলত ব্লগিং, ডিজিটাল মার্কেটিং, ব্যবসা, টেকনোলজি, ও পড়াশোনা রিলেটেড বিষয়বস্তু নিয়ে লেখা হয়। এটি শুরু করা হয় ২০১৮ সালের মে মাসের দিকে। এই সাইট টি আমার প্রথম ওয়েবসাইট তাই অনেক বাধা বিপত্তি সত্বেও আমি এই সাইটটিকে আমার কাছে রেখে দিয়েছি। আমার লেখা কোনো আর্টিকেল পড়ে যদি আপনাদের ভালো লাগে অথবা মন্দ লাগে তবে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।
ধন্যবাদ সবাইকে।