কর্ণফুলী টানেল বা বঙ্গবন্ধু টানেল রচনাটি ১০ টি পয়েন্ট দিয়ে বানানো এবং এতে কোনো অযথা পয়েন্ট ও লাইন যোগ করা হয়নি, যা পরীক্ষায় ভালো নাম্বার পেতে সাহায্য করবে।
Table of Contents
বাংলাদেশের মানুষ স্বপ্ন দেখে নতুন সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত উন্মোচনের ব্যাপক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির। একসময় এদেশের মানুষকে বলা হতো ভাবপ্রবণ জাতি, ভিতু ও ভেতো বাঙালি। প্রকৃতপক্ষে তারা যে সাহসী ও সংগ্রামী, পরিশ্রমী ও ত্যাগী এবং স্বপ্নদ্রষ্টা ও বাস্তবায়নকারী তা এখন সারা পৃথিবীর মানুষের অজানা নয়।
তারা সুস্পষ্টভাবে জানে, বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। বাংলাদেশে এখন একের পর এক মেগা উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন চলছে। এই ধারায় যুক্ত হয়েছে আর একটি মেগা প্রকল্প- 'বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল' বা 'কর্ণফুলী টানেল', যা বাংলাদেশের বাণিজ্যিক যোগাযোগ ব্যবস্থায় সূচনা করবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন।
কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে চার লেন বিশিষ্ট যে অত্যাধুনিক সুড়ঙ্গ পথটি নির্মিত হচ্ছে সেটির নাম দেওয়া হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল বা কর্ণফুলী টানেল। এটি চট্টগ্রাম শহরের পতেঙ্গা নেভাল একাডেমি সংলগ্ন এলাকায় কর্ণফুলী নদীর মোহনার পাশ ঘেঁষে কর্ণফুলী নদীর নিচ দিয়ে নির্মাণাধীন রয়েছে। এটিই বাংলাদেশে নির্মিত প্রথম টানেল বা সুড়ঙ্গ পথ।
বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নদী কর্ণফুলী। এটি বাণিজ্যিক নগরী চট্টগ্রামকে দুটি ভাগে বিভক্ত করেছে। এ নদীর উপর ইতোমধ্যে তিনটি সেতু নির্মিত হলেও অতি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অঞ্চলের জন্য তা যথেষ্ট নয়।
তাছাড়া এ নদীর উপর সেতু নির্মাণের ফলে তলদেশে পলি জমে সমস্যা তৈরি করছে যা চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য বড় হুমকি। এ কারণেই কর্ণফুলী নদীর উপর নতুন সেতু নির্মাণ না করে নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের উদ্যোগ বেশি গুরুত্ব পেয়েছে ।
প্রায় তের বছর আগে চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানের একটি জনসভায় চট্টগ্রামবাসীকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করার জন্য ২০১৪ সালের ১০ জুন প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বেইজিংয়ে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।
সেই অনুযায়ী ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং এ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এরপর ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় টানেল প্রকল্প এলাকার কনস্ট্রাকসন ইয়ার্ডে সুইচ টিপে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল বা কর্ণফুলী টানেল নির্মাণের খননকাজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল প্রকল্পটি বাংলাদেশ ও চীন সরকারের যৌথ অর্থায়নে সেতু কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ প্রকল্পটির মোট ব্যয় হবে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি ৪২ লাখ টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে ৪ হাজার ৪৬১ কোটি ২৩ লাখ টাকা আর চুক্তি অনুযায়ী চীনের এক্সিম ব্যাংক ২০ বছর মেয়াদি ঋণ হিসেবে দিচ্ছে ৫ হাজার ৯১৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা ।
চার লেন বিশিষ্ট দুটি টিউব সংবলিত মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩.৪৩ কিলোমিটার। নদীর তলদেশে প্রতিটি টিউবের চওড়া ১০.৮ মিটার বা ৩৫ ফুট এবং উচ্চতা ৪.৮ মিটার বা ১৬ ফুট। একটি টিউব থেকে আর একটি টিউবের পাশাপাশি দূরত্ব ১২ মিটার। টানেলের প্রস্থ ৭০০ মিটার এবং দৈর্ঘ্য ৩ হাজার ৪০০ মিটার। এছাড়া টানেলের পশ্চিম ও পূর্ব প্রান্তে ৫.৩৫ কিলোমিটার অ্যাপ্রোচ রোড এবং ৭২৭ মিটার ওভারব্রিজ থাকবে, যা চট্টগ্রাম শহরের সঙ্গে আনোয়ারা উপজেলাকে সংযুক্ত করবে।
সব ধরনের চ্যালেঞ্জের বিষয়গুলো বিশেষভাবে বিবেচনা করেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের নকশা ও উপকরণ ব্যবহার করা হয়েছে। এ প্রকল্পের প্রধান সরঞ্জামই হলো শিল্ড মেশিন, যা সম্পূর্ণ চীনা প্রযুক্তি ও উপকরণ ব্যবহার করেই কেবল এই টানেলের জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে।
বিশেষায়িত যন্ত্র দিয়েই তৈরি হচ্ছে এই টানেল। নদীর পানি বা অন্য কোনো তরল পদার্থ যাতে টানেলে প্রবেশ করতে না পারে, সেজন্য প্রতিটি সেগমেন্ট নির্মাণ করা হচ্ছে অ্যান্টিসিপেস ম্যাটেরিয়াল দিয়ে। ভেতরে বাতাস প্রবেশের জন্য থাকছে ২০টি শক্তিশালী পাখা। থাকবে পর্যাপ্ত আলো সরবরাহের ব্যবস্থা। তাছাড়া টানেলের নিচে পাম্পঘর রাখা হয়েছে, যাতে টানেলে পানি বা কোনো তরল পদার্থ ঢুকলে তা পাম্প করে বের করা যায়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল প্রকল্পের সার্বিক ভৌত অগ্রগতি ৭১ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। চট্টগ্রাম নগরের পতেঙ্গা প্রান্ত থেকে কর্ণফুলী নদীর তলদেশ হয়ে নদীর ওপাড়ে আনোয়ারা পর্যন্ত একটি টিউব পরিপূর্ণভাবে স্থাপন করা হয়েছে। এখন এটির ইন্টারনাল স্ট্রাকচার নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে।
ইতোমধ্যে ল্যান্ড স্লাব ঢালাইয়ের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। অন্যদিকে দ্বিতীয় টিউব স্থাপনের কাজও প্রায় শেষের দিকে। দ্বিতীয় টিউবের ১৯৬৮ মিটার অর্থাৎ ৮০.৫৯ শতাংশ বোরিং কাজ সম্পন্ন হয়েছে। টানেলের সবকটি অর্থাৎ ১৯,৬১৬টি সেগজুলাইন্টের নির্মাণ ও রিজেক্টেড সেগজুলাইন্টের সমপরিমাণ সেগজুলাইন্টের পুনর্নির্মাণ কাজও সম্পন্ন হয়েছে।
অন্যদিকে আনোয়ারা প্রান্তের ৭২৭ মিটার ভায়াডাক্টের গার্ড রেল ও ওয়েস্ট জয়েন্ট কনস্ট্রাকশনের কাজ চলমান রয়েছে। টানেলের পশ্চিম ও পূর্ব প্রান্তে মোট ৫.৩৫ কিলোমিটার অ্যাপ্রোচ সড়কের কাজ চলমান রয়েছে। প্রকল্পের অধিগ্রহণ ও রিকুইজিশনযোগ্য মোট ৩৮৩ একর ভূমির মধ্যে ৩৬২.৩২ একর ভূমি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। অবশিষ্ট ১৯.৭৬ একর ভূমি হস্তান্তরের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এছাড়া টানেল প্রকল্পের ম্যানেজজুলাইন্ট সফটওয়্যারের কাজ প্রায় শেষ। হার্ডওয়্যার স্থাপন ও বিবিএ বিল্ডিং নেটওয়ার্কের কাজ পূর্বেই সম্পন্ন হয়েছে।
করোনায় কর্মীর সংখ্যা হ্রাস পেলেও এখন বেশিরভাগ বাংলাদেশি এবং ৩০০ চীনা কর্মী ও প্রকৌশলী মিলে ১,০০০ কর্মী দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছে। নির্মাণপরবর্তী রক্ষণাবেক্ষণের জন্য হ্যান্ডবুক তৈরি করা হয়েছে। দেশীয় কর্মীদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে যাতে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা রক্ষণাবেক্ষণের কাজ শুরু করতে পারেন।
প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডির প্রতিবেদন অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল চালুর প্রথম বছরে ৬৩ লাখ গাড়ি চলাচল করতে পারবে। সেটি ক্রমান্বয়ে বেড়ে দেড় কোটিতে পৌছাবে।
প্রথম বছরে চলাচলকারী গাড়ির প্রায় ৫১ শতাংশ হবে কনটেইনার পরিবহনকারী ট্রেইলর ও বিভিন্ন ধরনের ট্রাক ও ভ্যান। বাকি ৪৯ শতাংশের মধ্যে ১৩ লাখ বাস ও মিনিবাস এবং ১২ লাখ কার, জিপ ও বিভিন্ন ছোট গাড়ি চলাচল করবে।
কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে দেশের প্রথম টানেল হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের অর্থনৈতিক ও সামাজিক গুরুত্ব অপরিসীম। এটি শুধু দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে তুলবে না, এটির মাধ্যমে দক্ষিণ চট্টগ্রামের শিল্পকারখানাসহ অর্থনৈতিক বিপ্লব সাধিত হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নির্মাণের ফলে ফিন্যান্সিয়াল ও ইকোনোমিক আইআরআর-এর পরিমাণ দাঁড়াবে যথাক্রমে ৬ দশমিক ১৯ শতাংশ এবং ১২ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এছাড়া বেনিফিট কস্ট রেশিওর পরিমাণ দাঁড়াবে যথাক্রমে ১ দশমিক ০৫ এবং ১ দশমিক ৫ । ফলে জিডিপিতে ব্যাপক ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে, অর্থাৎ জিডিপি শূন্য দশমিক ১৬৬ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে।
কারিগরি ও প্রযুক্তির উৎকর্ষের যুগে কোনো উন্নয়ন কর্মকাণ্ডই থেমে থাকে না। দেশ ও মানুষের মহত্তম কল্যাণ ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে এবং উন্নয়ন কর্মকে নিখুঁত, কার্যকর ও দীর্ঘস্থায়ী করতে বিজ্ঞানের এই উৎকর্ষকে কাজে লাগাতে হবে। বর্তমান সরকার ইচ্ছে ও উপায়কে সমন্বিত করে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড অব্যাহত রেখেছে। 'বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল' বা 'কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ তারই একটি - সাফল্য-সোপান। আমাদের সবাইকে দেশ ও জাতির কথা ভাবতে হবে, ইচ্ছে ও উপায়কে সমন্বিত করে কারিগরি ও প্রযুক্তির উৎকর্ষকে কাজে লাগিয়ে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নির্মাণ করতে হবে।
Detailsbd.com একটি মাল্টিনিশ বাংলা ব্লগ সাইট যেখানে মূলত ব্লগিং, ডিজিটাল মার্কেটিং, ব্যবসা, টেকনোলজি, ও পড়াশোনা রিলেটেড বিষয়বস্তু নিয়ে লেখা হয়। এটি শুরু করা হয় ২০১৮ সালের মে মাসের দিকে। এই সাইট টি আমার প্রথম ওয়েবসাইট তাই অনেক বাধা বিপত্তি সত্বেও আমি এই সাইটটিকে আমার কাছে রেখে দিয়েছি। আমার লেখা কোনো আর্টিকেল পড়ে যদি আপনাদের ভালো লাগে অথবা মন্দ লাগে তবে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।
ধন্যবাদ সবাইকে।