কাঠের ফার্নিচার সবাই পছন্দ করে। কারণ কাঠের চেয়ার, টেবিল, আলমারি, ওয়ারড্রোব, কেবিনেট এসবের সৌন্দর্য্য অন্য সব ফার্নিচারকে হার মানাবে। ভাল ডিজাইনের কাঠের ফার্নিচার সবার সামনে আপনার রুচি ও আভিজাত্য ফুটিয়ে তুলতে পারে। অনেকসময় অসাবধানতায় শখ করে কেনা ফার্নিচার নষ্ট হয়ে যায়। তাই আমরা একই ফার্নিচার বছরের পর বছর ঝকঝকে-পরিষ্কার রাখতে সঠিকভাবে কাঠের ফার্নিচার ব্যবহারের কিছু টিপস বলবো।
বেশ কিছু সহজ ও ঘরোয়া পদ্ধতিতে কাঠের ফার্নিচার পরিষ্কার করার উপায় রয়েছে। এগুলো অনুসরণ করলে ধুলোবালি, রোদের উত্তাপ, পোকামাকড় বা জলীয় বাষ্প থেকে হওয়া দাগ অনায়াসে পরিষ্কার করা যায়।
কাঠের ফার্নিচারের বিভিন্ন কোণায় ময়লা জমতে পারে। তাই একদিন বা দুদিন পর পর ফার্নিচার মুছবেন। মোছার সময় শুকনো পাতলা কাপড় ব্যবহার করতে হবে। কারণ ভিজে কাপড়ে মুছলে দাগ পড়ার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া প্লাইউডের ফার্নিচারে পানি লাগলে নষ্ট হয়ে যায়। তবে কাঠে বেশি ময়লা জমলে লিকুইড ডিটারজেন্ট ও হালকা গরম পানি মিশিয়ে আলতো ঘষে ময়লা তুলে ফেলতে হবে।
চকচকে কাঠের ফার্নিচারের বার্ণিশ ধরে রাখতে স্পিরিট দিয়ে মুছতে পারেন। স্পিরিট দাহ্য হলেও বেশ ঠান্ডা থাকে, তাই কাঠে কোনো বিক্রিয়া করেনা। আর্টিফিশিয়াল কাঠ হলে কোরোসিনের মত মিনারেল ব্যবহার করে পরিষ্কার করতে পারেন। কেরোসিন পানির মত কাঠের সাথে লেগে থাকেনা, তাই কাঠ নষ্ট হবার সম্ভাবনা নেই।
বাজারে বিভিন্ন রকমের কাঠের ওয়াক্স পাবেন। এসব ওয়াক্স দিয়ে ফার্নিচার পরিষ্কার করার পাশাপাশি কাঠের দাগ ও গর্ত ঢেকে ফেলা যায়। ওয়াক্সের আস্তরণ কাঠকে বাইরের আঘাত ও তাবদাহ থেকে রক্ষা করে। বিশেষ করে ময়লা পড়লেও তা ওয়াক্সের উপরের স্তরে পড়ে। ওয়াক্সের সাথে নিরাপদে কাঠ পরিষ্কার করার টুলকিটও কিনতে পাওয়া যায়।
অনেকসময় হাত দিয়ে স্পর্শ করলে কাঠের ফার্নিচারের উপর নখের আচড় ও আঙুলের ছাপ পড়ে যায়। আঙুলের ছাপের সাথে হাত থেকে বিভিন্ন ময়লা ও জীবাণু ফার্নিচারের সাথে লেগে থাকে। তাই সেরা উপায় হলো হাতে রাবারের গ্লাভস লাগিয়ে পরিষ্কার করা। এতে পরিষ্কার করার সময় আপনার হাতও কাঠের স্টেইন থেকে সুরক্ষিত থাকবে।
গরম জিনিস রাখার জন্য প্রায়ই কাঠের ফার্নিচারে হিট স্টেইন হয়। এতে নতুন ফার্নিচারও অনেক দ্রুত পুরনো ফার্নিচারের মত ময়লা হয়ে যায়। আলতো করে বেকিং সোডা ও টুথপেস্ট মিক্স করে ঘষলে হিট স্টেইন উঠে যাবে। বেকিং সোডার সাথে লেবুর রস দিয়েই টেবিল বা চেয়ারে থাকা দাগ তুলতে পারবেন।
যেকোনো কাঠের ফার্নিচার ফেলে রাখলে ধুলা, অক্সাইড, পোকামাকড় ও আর্দ্রতার কারণে ঔজ্জ্বল্য হারিয়ে ফেলে। অসাবধানে টানা নেওয়া করার সময়ও সদ্য কেনা ফার্নিচার ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। তাই কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করে একই ফার্নিচার যুগের পর যুগে ব্যবহার করতে পারবেন।
কাঠের ফার্নিচারের প্রধান শত্রু পোকা মাকড়। ঘুনসহ নানারকম পোকা কাঠে গর্ত করে বাসা বাঁধে। এসব পোকামাকড় নিমের গন্ধ সহ্য করতে পারেনা। তাই নিমের তেল বের করে সেটা কাঠের উপর স্প্রে করতে পারেন। এছাড়া তেলাপোকার মত পোকামাকড় থেকে বাঁচতে কাঠের ফার্নিচারের সাথে ন্যাপথালিন লাগিয়ে রাখতে পারেন।
কাঠের ফার্নিচার সরাসরি জানালা ও দেয়ালের কাছে রাখা উচিৎ না। কারণ বর্ষা মৌসুমে ঘরের জানালা ও দেয়ালে বৃষ্টির পানি লাগে। এসময় আদ্রতাজনিতা কারণে কাঠের ফার্নিচার ফুলে যায়। একবার ফুলে গেলে কাঠের ঘনত্ব ও স্থায়ীত্ব অনেক কমে যায়। ফলে সহজেই ফার্নিচার ভেঙে যেতে পারে বা পোকার আক্রমণের শিকার হতে পারে।
বাসাবাড়ি পাল্টানোর কাজে বা ফার্নিচার কেনাবেঁচার সময়ে সরানো লাগে। এসময় অভিজ্ঞ মানুষ না থাকলে কাঠের দুর্বল অংশ ধাক্কা লেগে ভেঙে যেতে পারে। প্রায়ই দেখা যায় সিড়ি বা ভ্যানে ঘষা লেগে নতুন ফার্নিচারের রঙ উঠে যায়। একবার রঙ উঠে গেলে সেখানে নতুন রঙ মিশতে পারে না। এজন্য অভিজ্ঞ লোক নিয়ে প্লাস্টিকে মুড়িয়ে কাঠের ফার্নিচার পরিবহন করতে হবে।
ফার্নিচারের উপরে পানি, বেভারেজ, কফি এসব না রাখা ভাল সিদ্ধান্ত। এগুলো পড়লে কেমিক্যাল রিয়েকশনের কারণে বার্নিশ নষ্ট হয়ে যায়। অনেকে খাটের শেলফ, কেবিনেট ও টেবিলে সরাসরি গরম খাবারের প্লেট রাখে। এভাবে না রেখে টেবিলের উপর টেবিল শীট ও টেবিল ম্যাট রাখতে হবে যেন সরাসরি তাপ না লাগে।
অনেকসময় ছুটিতে থাকায় অথবা বাসা ছেড়ে দেবার কারণে ফার্নিচার অব্যবহৃত হয়ে থাকে। তখন বাতাসে থেকে প্রচুর ধুলিকণা পড়ে একসময় মোটা ময়লার আস্তরণ হয়ে যায়। তাই অব্যবহৃত ফার্নিচার সবসময় ঢেকে রাখতে হবে। ঢাকার জন্য পাতলা পলিথিন শিট বা কাপড় ভাল হবে। এমন কিছু ব্যবহার করা যাবেনা যা বাতাস চলাচল বন্ধ করে অতিরিক্ত তাপ তৈরি করে।
একসময় মনে করা হত সেগুন শাল, গজারি, মেহগনির মত শক্ত কাঠের ফার্নিচারই অনেকদিন ব্যবহার করা যায়। কিন্তু পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছে কাঠের স্থায়ীত্ব গাছের তুলনায় কাঠের মান ও ব্যবহারবিধির উপর বেশি নির্ভর করে।
তাই কাঠের ফার্নিচার কিনতে হলে এমন শপ থেকে কিনতে হবে যারা দেশব্যাপী প্রসিদ্ধ এবং ওয়ারেন্টি সুবিধা দেয়। আমাদের টিপস অনুযায়ী সঠিকভাবে পরিষ্কার ও সংরক্ষণ করতে পারলে একই ফার্নিচার বেশ কয়েক প্রজন্ম ব্যবহার করতে পারবে।
Detailsbd.com একটি মাল্টিনিশ বাংলা ব্লগ সাইট যেখানে মূলত ব্লগিং, ডিজিটাল মার্কেটিং, ব্যবসা, টেকনোলজি, ও পড়াশোনা রিলেটেড বিষয়বস্তু নিয়ে লেখা হয়। এটি শুরু করা হয় ২০১৮ সালের মে মাসের দিকে। এই সাইট টি আমার প্রথম ওয়েবসাইট তাই অনেক বাধা বিপত্তি সত্বেও আমি এই সাইটটিকে আমার কাছে রেখে দিয়েছি। আমার লেখা কোনো আর্টিকেল পড়ে যদি আপনাদের ভালো লাগে অথবা মন্দ লাগে তবে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।
ধন্যবাদ সবাইকে।