বর্তমানে ঘরে বসে আয় করার অন্যতম মাধ্যম হলো ইউটিউব। বাংলাদেশে দিন দিন ইউটিউবের জনপ্রিয়তা যেমন বাড়ছে, তেমনি অনেকের কাছেই এখন এটি অর্থ আয়ের জন্য একটি দারুণ মাধ্যম হিসাবে গড়ে উঠছে। অনেকেই এখন ফুলটাইম ক্যারিয়ার হিসেবে ইউটিউব কে বেছে নিয়েছেন।
বর্তমানে অনায়াসে ইউটিউবাররা মাসে লক্ষ লক্ষ টাকা ইনকাম করছে।আর তাই বাংলাদেশের তরুণদের অনেকে পেশাদারি ভাবে ভিডিও/ কনটেন্ট তৈরি করছে ইউটিউবের জন্য। আর এসব ভিডিওতে লক্ষ লক্ষ ভিউ হচ্ছে।শুধু বাংলাদেশে এ নয় সারা বিশ্বে
ইউটিউব এখন আয় করার জন্য একটি জনপ্রিয় মাধ্যম।
ইউটিউব ভিডিওর মাধ্যমে মানুষ তার কর্মদক্ষতা ও সৃজনশীলতা বিশ্ববাসীর কাছে উপস্থাপন করছে।যার ফলে অনেকেই এসব শিখে নিজেকে দক্ষ করে তুলতে পারছে।
ইউটিউবে এমন কয়েকটি চ্যানেল বর্তমানে অনেক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।তার মধ্যে রান্নাবান্নার চ্যানেল গুলো ই এগিয়ে।বাঙালি সবসময়ই ভোজন রসিক। কিন্তু রান্নাবান্নার বিষয়টিতে সবাই তেমন এক্সপার্ট না।। তাদের জন্য নতুন নতুন খাবারের রেসিপি নিয়ে সবসময় পাশে থাকে রান্নাবান্নার চ্যানেল গুলো।৷ দেশি বিদেশি অনেক রকম খাবার তৈরির ভিডিও দেখা যায় অহরহো।আমাদের দেশের নারীরা ঘরে বসে তাদের দক্ষতা সকলের কাছে পেশ করার মাধ্যমে যেমন অন্যকে শেখানোর কাজটা করে যাচ্ছে তেমন উপার্জনের দিকটাও সম্পন্ন হচ্ছে।
আপনারা যদি ইউটিউব থেকে টাকা ইনকাম করতে চান তাহলে যেসব দিক গুলোকে প্রাধান্য দিতে হবে।
সর্বপ্রথম আপনার একটি চ্যানেল তৈরি করতে হবে। জি-মেইল ব্যবহার করে ইউটিউবে লগইন করে চ্যানেল তৈরি করা যায়।
ইউটিউব চ্যানেল ক্রিয়েট করার পর আপনাকে আপনার চ্যনেলটি কাস্টমাইজ করতে হবে। আপনার চ্যানেলে যদি কোন কভার না থাকে,কোন ডেসক্রিপশন না থাকে, কোনো প্রোফাইল না থাকে কোন ইন্ট্রো না থাকে, তাহলে কে ই বা আপনার চ্যানেল কে সাবস্ক্রাইব করবে? তাই চ্যানেল ক্রিয়েট করে আপনাকে প্রফেশনাল আউটলুক দিতে হবে।
চ্যানেল কে প্রফেশনাল করার জন্য সর্বপ্রথম আপনার প্রোফাইল পিকচার থাকতে হবে। তারপর লক্ষ্য রাখতে হবে কভার ফটোর দিকে।আপনি অবশ্যই চেষ্টা করবেন আপনার চ্যানেলটি কোন বিষয়ে তার উপরে কভার ফটো ক্রিয়েট করার। এরপর আপনাকে মাথায় রাখতে হবে ওয়াটারমার্ক বা ব্রান্ডিং অপশন। তারপর হচ্ছে চ্যানেল ব্যায়ো বা চ্যানেল কোন রিলেটেড সেটা এবং অন্যান্য সোশাল মিডিয়ার লিংক আপনি সেখানে দিতে পারেন। এছড়া চ্যানেল ট্রেলার বা ইন্ট্রো এসব যদি এড করেন তাহলে আপনার চ্যানেলের লুকটা অনেক বেশি প্রফেশনাল হবে।
আপনার কনটেন্ট তৈরি করার ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখুন যাতে আপনার কনটেন্ট টি অন্যরকম বা আলাদা ধরণের হয়। কারণ বর্তমানে অসংখ্য মানুষ ইউটিউব এ কনটেন্ট তৈরি করে। ইউটিউব প্রতিযোগিতা অসংখ্য।সেখানে আপনার উদ্দেশ্য থাকতে হবে আলাদা রকম। যেন দর্শকদের দেখার আকর্ষন থাকে আপনার ভিডিওর ওপর। তাই অবশ্যই চেষ্টা করতে হবে ব্যতিক্রম ধর্মী কনটেন্ট তৈরি করার। তা না হলে মানুষ আপনার তৈরিকৃত কনটেন্ট দেখতে আগ্রহী নাও হতে পারে।
শুধু ইউটিউব চ্যানেল থাকলেই বা আপনার তৈরিকৃত ভিডিও মানুষ দেখলেই আপনি টাকা আয় করতে পারবেন না। আয় করার জন্য আাপনাকে ইউটিউব পার্টনার প্রোগ্রামে আপনার চ্যানেল কে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।আপনার চ্যানেল কে ইউটিউব পার্টনার প্রোগ্রাম এ অন্তর্ভুক্ত করার পর ইউটিউব বিভিন্ন বিজ্ঞাপনদাতাদের ভিডিও আপনার ভিডিওর প্রথমে বা মধ্যখানে দেখাবে। তখন ই আপনি ইউটিউব ভিডিও থেকে টাকা আয় করতে পারবেন।
ইউটিউব পার্টনারশিপ প্রোগ্রামে অংশগ্রহন করার জন্য ও আপনাকে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিকে নজর দিতে হবে। তবেই আপনি ঐ পার্টনারশিপে অংশ নেওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন।ইউটিউব পার্টনারশিপ প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করার জন্য যে বিষয় গুলো গুরুত্বপূর্ণ সেগুলো হলো:
আপনি যদি উপরোক্ত শর্তাবলি সম্পন্ন করতে পারেন তাহলে আপনি ইউটিউব পার্টনারশিপ প্রোগ্রামে অংশগ্রহনের জন্য আবেদন করতে পারবেন।আপনি আপনার চ্যানেলের সেটিংস্ থেকে নটিফিকেশন অন করে রাখলে উপরোক্ত শর্তাবলি পূরন হওয়ার সাথেসাথেই নোটিফিকেশন এর মাধ্যমে আপনাকে জানানো হবে আপনার শর্তগুলো পূরণ হয়েছে। আপনি তখন ই চাইলে পার্টারশিপ প্রোগ্রাম এ আবেদন করে দিতে পারবেন।
বিজ্ঞাপন পাওয়া না পাওয়ার ক্ষেত্রে আপনাদের নিজেদের কিছু করার নেই। আপনার কনটেন্টের ধরন, ভিডিও গুলো দেখার প্রবণতা, দেশ ইত্যাদি বিবেচনা করে ইউটিউবে বিজ্ঞাপন গুলো দেয়।
অনেক গুলো প্রতিষ্ঠান তাদের বিজ্ঞাপন ইউটিউব কে দেয়। ইউটিউব সেসব বিজ্ঞাপনের পণ্যের বাজার বিবেচনা করে ভিডিওতে বিজ্ঞাপন সরবরাহ করে।
আপনার চ্যানেলের সাবস্ক্রাইব সংখ্যা কত, সেটা খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়, যদি ভিউয়ার রা আপনার চ্যানেলটি নিয়মিত না দেখেন।কারণ আপনার চ্যানেলের আয় নির্ভর বিজ্ঞাপনের ওপর। আপনার চ্যানেলের ভিউ যত বাড়বে, চ্যানেলটি ইউটিউব থেকে ততো বেশি বিজ্ঞাপন পাওয়া শুরু করবে। আর তখনই আপনি আয় করার সুযোগ পাবেন।
বর্তমানে ইউটিউব বিডি আসার পর এ ধরনের কনটেন্ট থেকে আয়ের হার প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। আগে দেখা যেত বাংলাদেশের কনটেন্টের এক লক্ষ ভিউ-র জন্য ২৫ ডলারের মতো আয় করা যেত। কিন্তু বর্তমানে এখন সেটা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে।
ইউটিউবের নিয়ম অনুযায়ী, আট মিনিটের কম ভিডিওতে যে পরিমাণ ডলার পাওয়া যায়, আট মিনিটের বড় ভিডিওতে তার থেকে প্রায় দ্বিগুণ ডলার পাওয়া যায়।
আপনি যদি আপনার একটি ভিডিও একই সঙ্গে ইউটিউব, ফেসবুক ও অন্যান্য সোশাল মিডিয়াতে শেয়ার করে দেন তবে আপনার ভিডিওর ভিউ বাড়তে থাকবে। সাধারণত সব ইউটিউবার রা এই কাজটি করে থাকেন। সেখানে মানুষ আপনার ভিডিও কতক্ষণ ধরে দেখছে, কতটুকু দেখলো, কতটুকু না দেখলো, এর ওপর বিজ্ঞাপন বাড়ে বা কমে।
দশ(১০)মিনিটের একটা ভিডিও যদি গড়ে (৫-৬) মিনিট করে দেখা হয়, তাহলে এক লক্ষ ভিউ হলে (১৩-১৪) হাজার টাকা আয় করা যেতে পারে। তবে আপনার ভিডিও যদি দশ(১০) মিনিটের নিচে হয় তহলে আপনার আয় ও অর্ধেক হয়ে যাবে।আপনার
আপনার ভিডিওর জন্য ইউটিউব থেকে আপনি কত টাকা পাবেন তা বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভর করে, যেমনঃ
ইউটিউব সিপিএম(CPM) অথবা কস্ট পার মাইলস/থাউস্যান্ডের হার এবং সিপিসি(CPC) বা কস্ট পার ক্লিক-এর ভিত্তিতে সাধারণত ডলার দেওয়া হয়ে থাকে।একজন ইউটিউবারের সিপিএম রেটও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ওঠা নামা করে থাকে।
যাদের প্রযুক্তি ভিত্তিক চ্যানেল আছে তাদের সিপিএম(CPM) রেট সব থেকে বেশি থাকে। আপনার ভিউয়ার্স রা যদি ভারতীয় হয় সেক্ষেত্রে প্রযুক্তি ভিত্তিক চ্যানেল-এ আপনার সিপিএম(CPM) ৫ ডলার পর্যন্ত হতে পারে। অপরদিকে শিক্ষাভিত্তিক চ্যানেল যাদের তাদের সিপিএম(CPM) রেট সাধারণত কম হয়ে থকে কারণ তাদের ভিউয়ার্সদের বয়স মূলত ১৮ বছরের নিচে, এই বয়সের ভিউয়ার্সদের প্রতি বিজ্ঞাপনদাতাদের আগ্রহ খুব একটা থাকে না।
একটি শিক্ষা ভিত্তিক ব্লগ থেকে জানা গেছে তাদের সিপিএম (CPM) রেট ০.৫০ ডলার থেকে ২ ডলারে মধ্যে হয়ে থাকে। বিনোদন ভিত্তিক চ্যানেলের ক্ষেত্রে সিপিএম( CPM) রেট ১ থেকে ৩ ডলার এর মধ্যে হয়।
এদিকে কস্ট পার ক্লিক হল ভিউয়ার্সরা নির্দিষ্ট বিজ্ঞাপনের লিংক-এ ক্লিক করলে তার বিনিময়ে একটা নির্দিষ্ট পরিমান টাকা আয় করা।এটির মূল্য অনেকাংশেই নির্ভর করে বিজ্ঞাপনদাতাদের প্রোফাইলের ওপর। একবার আপনার চ্যানেল এর সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা ১০ লক্ষ পার হলে তবেই আপনি ইউটিউব থেকে ভালো পরিমাণ টাকা ইনকাম করতে পারবেন।
আগেই বলা হয়েছে ইউটিউব এর সাথে গুগল অ্যাডসেন্স অ্যাকাউন্ট জুড়ে দিতে হবে।এর কারণ হলো ইউটিউব গুগল অ্যাডসেন্স-এর মাধ্যমে টাকা পাঠায়। প্রত্যেক মাসের দশ (১০) থেকে চৌদ্দ(১৪)তারিখের মধ্যে ইউটিউব আপনার অ্যাডসেন্স অ্যাকাউন্টে ডলার পাঠাবে। আপনার অ্যাডসেন্স অ্যাকাউন্টে ১০ ডলার জমা হলে গুগল আপনাকে একটি কোড পাঠানো হবে। আপনাকে আপনার অ্যাকাউন্টে সেই কোডটি ভেরিফাই করাতে হবে। এরপর আপনার অ্যাকাউন্টে ১০০ ডলার জমা হলে গুগল আপনার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে আপনার আয় করা টাকা পাঠিয়ে দেবে।
ইউটিউব থেকে পাওয়া ডলার বাংলাদেশে টাকাতে কনভাট করতে হয়। আর টাকা বের করার পদ্ধতিকে পেআউট বলা হয়।
ইউটিউব এর ক্ষেত্রে আপনাকে অন্তত একশো(১০০) ডলার জমা হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এর আগে আপনি টাকা তুলতে পারবেন না। একশো(১০০) ডলারের বেশি হলে সেটা গুগল অ্যাডসেন্স ব্যবহার করে আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠিয়ে দেওয়া হবে। এরপর আপনি আপনার আয় করা টাকা অ্যাকাউন্ট থেকে তুলতে পাবেন।
আপনি যে বিষয়ের উপর চ্যানেল তৈরি করেন না কেন,আপনাকে আপনার চ্যানেলের স্বকীয়তা বজায় রাখতে হবে। আপনার চ্যানেল টি যাতে ভিউয়ার্স রা আলাদা করতে পারে। আপনি যেরকম কনটেন্ট ই আপলোড করুন না কেন তাতে যেন কপিরাইটের কোন ঝামেলা না থাকে, কারণ কপিরাইট নিয়ে প্রশ্ন উঠলে বা স্ট্রাইক দিলে পুরো চ্যানেল টা বাতিল হয়ে যেতে পারে।
একটি ইউটিউব চ্যানেল খুলে টাকা আয় করা কোনো কঠিন কাজ না। কিন্তু এর জন্য অনেক ধর্য নিয়ে কাজ করে যেতে হবে।ইউটিউবে যারা কাজ করে যাচ্ছে এবং যারা সফলতা অর্জন করেছে তাদের দেখে আপনিও চ্যানেল খুলে বসবেন না।তাদের সফলতার পিছনে রয়েছে কয়েকটি বছরের শ্রম।তাই সকল দিক বিবেচনা করে আপনি ও আপনার ইউটিউব জার্নি শুরু করতে পারেন। তবে
কঠোর পরিশ্রম ও ধর্য ধারন করে আপনার কাজের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারলে আপনিও পেতে পারেন সফলতা।
Detailsbd.com একটি মাল্টিনিশ বাংলা ব্লগ সাইট যেখানে মূলত ব্লগিং, ডিজিটাল মার্কেটিং, ব্যবসা, টেকনোলজি, ও পড়াশোনা রিলেটেড বিষয়বস্তু নিয়ে লেখা হয়। এটি শুরু করা হয় ২০১৮ সালের মে মাসের দিকে। এই সাইট টি আমার প্রথম ওয়েবসাইট তাই অনেক বাধা বিপত্তি সত্বেও আমি এই সাইটটিকে আমার কাছে রেখে দিয়েছি। আমার লেখা কোনো আর্টিকেল পড়ে যদি আপনাদের ভালো লাগে অথবা মন্দ লাগে তবে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।
ধন্যবাদ সবাইকে।