কেক হলো ডেজার্ট আইটেম এর মধ্যে অন্যতম একটি খাবার। প্রায় সব অনুষ্ঠানের শুরুটাই হয় কেক কাটার মাধ্যমে। তাই আজকে আপনাদের শেখাবো কেক বানানোর সহজ রেসিপি।
আপনি চাইলে আপনার ঘরেই তৈরি করে ফেলতে পারেন একটি পারফেক্ট কেক। এতে আপনি কেকের পারফেক্ট টেস্ট ও পেয়ে যাবেন, আবার আপনার অনেকগুলে টাকা ও বেঁচে গেল। আবার আপনাদের সকল অনুষ্ঠানের জন্য আপনারা নিজেরাই ঘরে গ্যাসের চুলায় পারফেক্ট কেক বানিয়ে নিতে পারবেন। তবে আসুন দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক, কিভাবে একটি পারফেক্ট কেক বানিয়ে নিতে পারবেন সহজে।
একটি পারফেক্ট ভ্যানিলা স্পঞ্জ কেক(১ পাউন্ড) বানানোর জন্য প্রথমেই আমাদের নিখুঁত ভাবে সকল উপকরন মেপে নিতে হবে। উপকরন গুলো হলো:
এই উপকরন গুলো মেপে নেওয়ার জন্য আপনারা ব্যাবহার করতে পারেন ইলেকট্রনিক কিচেন স্কেল নামক একটি যন্ত্র দ্বারা। যদি পারফেক্ট একটি কেক তৈরি করতে চান তাহলে অবশ্যই উপরে উল্লেখিত উপকরন গুলো সঠিকভাবে পরিমাপ করে নিতে হবে।
তারপর আমরা আসি তৈরি পদ্ধতিতে, প্রথমে পরিমাপ করা শুকনো উপকরন গুলো (ময়দা,কর্ণ ফ্লাওয়ার, বেকিং পাউডার) ২ বার চেলে একপাশে ডাকনা দিয়ে রেখে দিতে হবে।
তারপর, ডিম ২ টিকে খুব ভালো ভাবে একটি ইলেকট্রিক বিটারের সাহায্যে বিট করে নিতে হবে। অবশ্যই নরমাল টেম্পারেচারের হতে হবে ডিম গুলো। যদি ডিম ফ্রিজে থেকে থাকে, তবে ১/২ ঘন্টা আগে নামিয়ে রাখতে হবে। ডিম ততোক্ষন বিট করতে হবে যতোক্ষন পর্যন্ত ফোম তৈরি না হয়। তারপর পরিমাপ করা চিনি (৫০গ্রাম) আস্তে আস্তে ২/৩ বারে ঢেলে ঢেলে বিট করে নিতে হবে। তারপর ১০ গ্রাম সয়াবিন তেল পুরোটা একসাথে ঢেলে আবার বিট করে নিতে হবে। এবার শুকনো উপকরন গুলো মিশ্রনটির সাথে চেলে চেলে ২/৩ বারে মিশিয়ে নিতে হবে। মিশাতে হবে একটি স্পেচুলার সাহায্যে,খুবই ধীরে ধীরে। যাতে ডিমের ফোমটা চুপসে না যায়। তারপর একটি ৬/৭ ইঞ্চি কেক মোল্ডে সামান্য সয়াবিন তেল ব্রাস করে একটি বেকিং পেপার বিছিয়ে দিতে হবে। এরপর সম্পূর্ণ বেটারটি ঢেলে একটু ঝাকিয়ে নিতে হবে। এতে বেটারের মধ্যে কেনো বাবল থাকলে সেগুলো মরে যাবে।
এবার একটি বড় সাইজের সিলভারের পাতিল নিয়ে এতে একটি স্ট্যান্ড বসাতে হবে। পাতিলকে ভালো ভাবে কভার করার জন্য একটি ডাকনা দিয়ে ঢেকে ৫-১০ মিনিট চুলায় তাপ দিয়ে আগেই রাখতে হবে। যেনো পাতিলের ভেতর থেকে কোনো তাপ বাহিরে না আসে। এরপর বেটার সহ মোল্ডটি স্ট্যান্ডের উপর সোজা করে বসাতে হবে৷ তারপর ২৫-৩০ মিনিট মিডিয়াম টু লো হিটে বেক করে নিতে হবে৷ বেক করা হয়েছে কি না তা চেক করে নিতে পারবেন যে কোনো কাঠি দিয়ে৷ কেকের ভিতর সম্পূর্ণ কাঠিটি দিয়ে দেখবেন কাঠিটি স্মুথ বের হয়ে আসছে কি না। যদি আসে তাহলে বুঝবেন কেকটি হয়ে গেছে৷ আর যদি আপনার বাসায় ওভেন থেকে থাকে তাহলে ১৬০° প্রিহিটেড ওভেনে ২৫-৩০ মিনিট বেক করে নিলেই হয়ে যাবে।
কেকটিকে ঠান্ডা হতে দিয়ে আমরা চলে যাবো ক্রিম তৈরির পর্যায়ে। এক্ষেত্রে আপনি আপনার পছন্দের যে কোনো ব্রান্ডের ক্রিম ব্যাবহার করতে পারেন। তবে হাতের নাগালের মধ্যে আপনারা ট্রপিকাল ব্রান্ডের হুইপ ক্রিম টি পেয়ে যেতে পারেন। এলাকা ভিত্তিক (২২০-২৮০) টাকার মধ্যেই পেয়ে যাবেন। মনে রাখতে হবে ক্রিমটি ডিপ ফ্রিজেই যেহেতু সংরক্ষন করা থাকে তাই ১ ঘন্টা আগে নামিয়ে রাখতে হবে। এবার হালকা বরফ থাকা অবস্থায় ১৮০-২০০গ্রাম ক্রিম নিয়ে বিটারের সাহায্যে ভালো ভাবে বিট করে নিতে হবে। ক্রিমটি পারফেক্ট হয়েছে কি না তা বুঝবেন বিটারের গা থেকে ক্রিমটি পড়ে যাবে না। যে পাত্রে ক্রিমটি বিট করবেন ওই পাত্রটি উল্টো করে দিলে ও ক্রিমটি নিচে পড়ে যাবে না যদি পরফেক্ট ক্রিম তৈরি হয়ে যায়।আর যদি দেখেন যে পড়ে যেতে নিচ্চে, তাহলে আরো কতোক্ষন বিট করে নিতে হবে। এক্ষেত্রে ক্রিমটি তৈরি হতে প্রায় ৬-৭ মিনিট সময় লাগে।
এবার আপনার কেকের হাইট অনুযায়ী কেকটিকে২-৩ টি স্লাইস করে কেটে নিতে হবে৷
এক কাপ পানিতে ৩ চা চামচ চিনি দিয়ে মিশিয়ে নিলেই তৈরি হয়ে যাবে সুগার সিরাপ।
এবার কেক বোর্ডে একটু ক্রিম দিয়ে একটি স্লাইস বসিয়ে দিয়ে তার উপর সুগার সিরাপ দিয়ে পুরো কেকের উপর ভিজিয়ে দিতে হবে৷ যেনো কেকটি সপ্ট ও ময়েস্ট থাকে৷
এবার ক্রিম দিয়ে পুরো কেকটাকে কভার করে নিতে হবে। এই প্রোসেসে সবগুলো স্লাইস কভার করতে হবে৷ তারপর অল্প কিছু ক্রিম নিয়ে ক্রাম কোটিং করে ৩০ মিনিটের জন্য নরমাল ফ্রিজে রেখে দিতে হবে৷ যেনো কেকের গুড়ো উপরে উঠে না আসে।
তারপর নিজের পছন্দ মতো ক্রিমে কালার মিশিয়ে ডেকোরেশন করে নিতে পারবেন৷ তবে ফুড কালার এর মধ্যে ও রয়েছে নানা ব্রান্ডের কালার।কোনটি আপনি বাঁছাই করবেন? তার ও সমাধান আছে, কালারের জন্য আপনারা ভালো মানের দুটি ব্রান্ড বাছাই করে নিতে পারেন। তা হলো :রেডমেন ও বেকমেন।আর হ্যা, কেকের ডেকোরেশন এর জন্য বেসিক কয়েকটি নজেল এর মাধ্যমে খুব সহজেই ডিজাইন করতে পারবেন। সেগুলো হলো:1M, 2D, 2F, 6B, 360, ROSE NOZZLE. কেকের ডেকোরেশন এর জন্য আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হলো
চকোলেট, হোয়াইট চকোলেট ও ডার্ক চকোলেট।এক্ষেত্রে আপনারা আপনাদের পছন্দের কোনো চকোলেট ও নিতে পারেন তবে ব্লুবেল কম্পানির চকোলেট ও খুবই ভালো হয় কেকের জন্য। আপনারা কেক তৈরি করার সকল সরঞ্জাম অনলাইনের নানান পেজে পেয়ে যাবেন পারেন নিমিষেই।
একই পদ্ধতি অবলম্বন করে চকোলেট ফ্লেভার,স্ট্রবেরি ফ্লেভার,অরেঞ্জ ফ্লেভার,ম্যাঙ্গো ফ্লেভার সব ধরনের কেক ই তৈরি করতে পারবেন। উপরের নিয়ম অনুযায়ী কেক তৈরি করলে আপনি অবশ্যই পারফেক্ট ভ্যানিলা স্পঞ্জ কেক বানাতে পারবেন।
একটি ১ পাউন্ড এর চকোলেট স্পঞ্জ কেক তৈরি করতে যা যা উপকরন প্রয়োজন তা নিচে দেওয়া হলে :
একটি ১ পাউন্ড এর স্ট্রবেরি স্পঞ্জ কেক তৈরি করতে যা যা উপকরন প্রয়োজন তা নিচে দেওয়া হলে :
একটি ১ পাউন্ড এর অরেঞ্জ স্পঞ্জ কেক তৈরি করতে যা যা উপকরন প্রয়োজন তা নিচে দেওয়া হলে :
একটি ১ পাউন্ড এর ম্যাঙ্গো স্পঞ্জ কেক তৈরি করতে যা যা উপকরন প্রয়োজন তা নিচে দেওয়া হলে :
এখানে প্রতিটি ফ্লেভারের কেকের জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত উপকরণ পরিমান মতো উল্লেখ করা হয়েছে। এভাবে যদি কেক তৈরি করতে পারেন তাহলে শুধু আপনি নিজের জন্য নয়, এই পদ্ধতি অবলম্বন করে আপনারা সফল উদ্যক্তা ও হতে পারেন।
হুইপড করা ক্রীম ডিপে সংরক্ষণ করেছি, পরবর্তীতে কীভাবে ব্যবহার করবো???
আমি আমার অভিজ্ঞতা থেকে লিখছি, অনেক সময় ক্রীম বেশি হয়ে যায় যা আমরা এয়ারটাইট বক্সে করে ডিপে রেখে দেই। সেই ক্রীমটা ব্যবহার করার ১৫মিনিট আগে ডিপ থেকে বের করবেন। ১৫ মিনিট পর হাই স্পিডে এক মিনিট বিট করে কাজ শুরু করবেন। ডিপে রাখা ক্রীমে কখনোই কালার এড করতে যাবেন না। সংরক্ষণ করা যেকোনো ক্রীমের ই গুন কিছুটা কমে যায়।
নজেল দিয়ে ডেকোরেশন করাও কষ্ট হয়ে যায়। নজেল দিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে কিছুটা ক্রীম আবার তৈরি করে নেবেন, সুন্দর ডেকোরেশন এর জন্য (আমি নিজেও নজেল দিয়ে ডেকোরেশন এর আগে আবার ক্রীম তৈরি করি)
আর ডিপে রাখা ক্রীমটা কেকের লেয়ারে দিবেন আর কেকটা কভার করবেন। নজেল দিয়ে ডেকোরেশন করতে চাইলে বিট করার সাথেই সাথেই নজেল দিয়ে ডেকোরেশন করতে হবে। কিছুসময় পর ক্রীমটা নরম হয়ে যাবে তখন বিট করলেও হবেনা।
আমি বেশিরভাগ সময় ই ডিপে হুইপড করে রাখা ক্রীমের সাথে কোকো পাউডার+ সামান্য কর্নফ্লাওয়ার+চকোলেট ইমালশন দিয়ে ১ মিনিট হাই স্পিডে বিট করে চকোলেট ক্রীম তৈরি করে ফেলি। এই চকোলেট ক্রীম ব্যবহার করে নজেল দিয়ে সুন্দরভাবে ডেকোরেশন করা যায়
আমার কন্টেট আপনার জন্য কতোটুকু হেল্পফুল হয়েছে তা অবশ্যই আপনার মতামতের মাধ্যমে জানাবেন, অসংখ্য ধন্যবাদ সবাইকে।
Detailsbd.com একটি মাল্টিনিশ বাংলা ব্লগ সাইট যেখানে মূলত ব্লগিং, ডিজিটাল মার্কেটিং, ব্যবসা, টেকনোলজি, ও পড়াশোনা রিলেটেড বিষয়বস্তু নিয়ে লেখা হয়। এটি শুরু করা হয় ২০১৮ সালের মে মাসের দিকে। এই সাইট টি আমার প্রথম ওয়েবসাইট তাই অনেক বাধা বিপত্তি সত্বেও আমি এই সাইটটিকে আমার কাছে রেখে দিয়েছি। আমার লেখা কোনো আর্টিকেল পড়ে যদি আপনাদের ভালো লাগে অথবা মন্দ লাগে তবে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।
ধন্যবাদ সবাইকে।