বিড়াল - মানব জাতীর কল্যাণে আল্লাহতালা অসংখ্য জীবজন্তু সৃষ্টি করেছেন। তার মধ্যে বিড়াল অন্যতম। এই প্রাণীটি মানুষের খুবই নিকটে বসবাস করে এবং মানুষের নানা উপকার সাধন করে থাকে।
আজকের পোস্টে আমরা বিড়াল সম্পর্কিত অনেক গুলো টপিক নিয়ে কথা বলব। যা আপনাকে বিড়াল সম্পর্কে একটি পূর্ণাঙ্গ ধারণা দিবে।
জন্মিলে মরিতে হয়, কথাটা চিরন্তন সত্য। আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক প্রাণীকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। এবং একটা সময় প্রত্যেক প্রাণী মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। তবে স্বাভাবিকভাবে প্রত্যেক প্রাণীকুলের একটি গড় আয়ু নির্ধারণ করা হয়। যেটা অন্য সব প্রাণীর চেয়ে আলাদা হতে পারে।
গবেষণায় দেখা গেছে সাধারণত বিড়াল গড়ে ১৪-১৬ বছর পর্যন্ত বাঁচে যা একজন ১০০ বছর বয়সী মানুষের সমান।
জেনে নিন বিড়াল আঁচর দিলে কি হয় - বিড়াল পোষা প্রাণী হওয়ায় এটি মানুষের খুব নিকটে বসবাস করে। তাই স্বাভিকভাবে এই প্রাণীর আঁচর বা কামড় খাওয়াটাও অস্বাভিক কিছু নয়।
কিন্তু অনেকের মনে এই ভয় থাকে যে বিড়ালের আঁচড়ে বা কামড়ে জলাতঙ্কের বা অন্যকোন সমস্যা হবে কিনা? বিড়ালের কামড়ে বা আঁচড়ে আসলে কি কোন সমস্যা হতে পারে। সাম্প্রতিক আমেরিকান ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে যদি কাউকে বিড়ালে আক্রম করে এবং উক্ত ব্যক্তি যদি বিড়ালের কামড় বা আঁচড়ে আহত হোন তাহলে প্রথম ক্ষতস্থানের গভীরতা নিরূপণ করুন।
গভীরতা বেশি হলো বা অতিরিক্ত রক্তপাত হলে সেটিকে অবহেলা না করে। দ্রুত একজন বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি। জলাতঙ্কের জীবাণু বা ক্ষতিকারক ভাইরাসের হাত থেকে বাঁচার জন্য গরম সবান পানি ব্যবহার করুন।
অনেক সময় Antibiotic র্যাবিস ভাইরাস বা জলাতঙ্কের জীবাণুর বিরুদ্ধে ভালো কাজ দেয় না। সেক্ষেত্রে সাবান পানি খুবই কার্যকরী একটি সমাধান। তাছাড়াও হাতের কাছে খুব সহজে সাবান পানি পাওয়া যায় বলে এটি ব্যবহার করাই উত্তম। এছাড়া ও স্যাভলন বা ডেটল ব্যবহার করা যেতে পারে।
তবে অতিরিক্ত রক্তপাত হলে সেটা বন্ধের ব্যবস্থা করতে হবে। এবং রক্ত পড়া বন্ধ হলে দ্রুত ব্যান্ড এইড বা গজ খুলে পেলতে হবে। অন্যথায় আলো বাতাস চলাচলে ব্যাঘাত ঘটলে জীবাণুতে সংক্রামিত হতে পারে। ক্ষতস্থান লাল হয়ে গেলে বা ফুলে উঠলে। অথবা তীব্র ব্যথা বা যন্ত্রণা করলে দ্রুত একজন চিকিৎসা করে শরণাপন্ন হওয়া জরুরী।
বিড়ালের কামড় বা আঁচড়ের ফলে ক্যাট স্ক্র্যাচ ডিজিজ অর্থাৎ জ্বর, ফোসকা পড়া, পেট বা পিঠে ব্যথার মতো লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে, বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা থেকে বাঁচা যায়।
জেনে নিন বিড়াল কামড়ালে কি ভ্যাকসিন দিতে হয় কিনা - প্রাথমিকভাবে চিকিৎসকরা বিড়ালের কামড়ের জন্য ভ্যাকসিন না দিলেও ক্ষত বা আঘাতের পরিমাণ দেখে চিকিৎসকরা নির্ণয় করবেন, আপনাকে ভ্যাকসিন দিতে হবে কিনা।
যদি তারা ভ্যাকসিন দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেন তাহলে রেবিস নামক একধরনের ভ্যাকসিন দিয়ে থাকে যা বিড়ালের লালা দ্বারা সংক্রামিত ভাইরাইস প্রতিরোধে কাজ করে।
কুকুর বা বিড়ালের দাঁত গুলো ধারালো হওয়ায় এগুলো সহজে মাংস বেদ করে গভীরে প্রবেশ করে। অন্যদিক এদের লালা ক্ষত স্থানে প্রবেশ করার কারণে জলাতঙ্কসহ বিভিন্ন ধরনের রোগ হওয়ার প্রবণতা থাকে। তাই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন ও তাদের জরুরী।
বিড়ালের কামোর দ্বারা সৃষ্ট জলাতঙ্কেরর ভাইরাস প্রতিরোধ করার জন্য টিকা নেওয়া জরুরি। সাধারণত অসুস্থ্য ব্যক্তিকে ৫টি জলাতঙ্ক প্রতিরোধের টিকে দেওয়া হয়। এগুলোর সময়কাল হলো ১ম দিন, ৩য় দিন, ৭ম দিন, ১৪ তম দিন ও ২৮ তম দিন।
পোষা প্রাণী যেমন: গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি, ভেঁড়া, মহিষ, বিড়াল, কুকুর ইত্যাদি পালন করা জায়েজ আছে। এছাড়াও বিড়াল পালন সম্পর্কে অনেক হাদিসে প্রামাণ পাওয়া যায়।
আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম ও তার সাহাবীগণ বিড়াল পালন করেছেন যা হাদিস দ্বারা প্রমাণিত - বুখারি, ৩৪৮২ হাদিস।
এছাড়াও প্রখ্যাত সাহাবী হয়রত আবদুর রহমান (রা) বিড়াল পালতে খুবই ভালোবাসতেন যার কারণে উনি সব জায়গায় বিড়াল নিয়ে ঘুরে বেড়াতেন। একদিন তিনি জামার আস্তিনের নিচে করে বিড়াল নিয়ে রাসূল (সা.) এর নিকট উপস্থিত হোন। যা দেখে হযরত মুহাম্মদ (সা:) মজা করে আবু হুরায়রা অর্থাৎ বিড়ালের বাপ বলে ডাক দেন। তখন থেকে আবদুর রহমান নাম পরিবর্তন করে আবু হুরায়রা রাখা হয়।
ব্যবসার উদ্দেশ্যে বিড়াল কেনা বেচা করা ইসলামী শরীয়ত সম্মত না। বিড়াল কেনা-বেচা নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন।
হয়রত আবু যুবায়র (রাঃ) বর্ণিত তিনি বলে একদা আমি জাবির (রাঃ) কে বিড়াল ও কুকুরের দাম জিজ্ঞাস করলে তিনি বলেন রাসূল (সাঃ) এ ব্যাপারে সবাইকে সাবধান করেছেন (সহীহ মুসলিম ৩৯০৭ নং হাদিস)।
এছাড়াও হিংস্র প্রাণী ও বিড়ালের মাংস খাওয়া মানুষের জন্য হারাম করা হয়েছে।
ইসলামে বিড়াল পালনের কোন উপকারের কথা সরিসরি উলেখ্যে করা হয়নি। তবে বিড়াল পালন যে পরিবেশ ও মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য উপকার রয়েছে তার বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত।
বিড়ালের কারণে ইঁদুর মানুষের ক্ষতি করতে পারেন না। এছাড়াও বিড়াল ক্ষতিকারক ভিবিন্ন প্রাণীকে মেরে পেলে যা আমাদের পরিবেশের জন্য খুবই উপকারী। একই সাথে বিড়াল আমাদরর ফেলে দেওয়া বর্জ খেয়ে পরিবেশকে সুন্দর রাখে।
তাছাড়ও বিড়াল পালনে শরীরিক ও মানসিক নানা উপকার রয়েছে। বিড়াল ২০-১৪০ হার্জ শব্দ উৎপাদন করতে সক্ষম। যা মানব দেহের অস্থিসন্ধি প্রদাহ নিরাময়ে থেরাপির মতো কাজ করে। গবেষণায় আরোও দেখা গেছে যারা বিড়াল পালন করেন তারা অন্যদের চেয়ে শারীরিকভাবে বেশি সুস্থ্য সবল থাকেন।
বিড়াল পুষলে মানসিক চাপ কমে আসে ফলে হূদরোগে আক্রন্ত হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে। যারা বাসা বাড়িতে ও দোকানে বিড়াল পালন করেন তাদের হূদরোগে আক্রন্ত হওয়ার ঝুঁকি অন্যদের চেয়ে ৩০ শতাংশ কম থাকে। তাই স্বাভাবিকভাবে বলা যায় বিড়াল পুষলে ক্ষতির চেয়ে লাভ অংশটাই বেশি থাকে।
রাসূল (সা) যুদ্ধ থেকে ফিরার পথে রাস্তায় একটি বিড়াল ছানাকে দেখতে পেয়ে সাথে করে বাসায় নিয়ে আসেন। যেটি ছিলো সাদা-কালো রংয়ের আবিসিনিয়ান বিড়াল। নবীজির বিড়ালের নাম ছিল 'মুয়েজ্জা'।
হযরত মুহাম্মদ (সা) যে বিড়াল পালান করেছেন তা হাদিস দ্বারা প্রামাণিত। এছাড়াও রাসুল (সাঃ) সাহাবীদের বিড়াল পালনের প্রতি উৎসাহিত করেছেন। এবং বিড়ালের প্রতি সদয় ব্যবহার ও তাদের খাবার-দাবারের উপরে নজর দেওয়ার নির্দেশ করেছেন।
Detailsbd.com একটি মাল্টিনিশ বাংলা ব্লগ সাইট যেখানে মূলত ব্লগিং, ডিজিটাল মার্কেটিং, ব্যবসা, টেকনোলজি, ও পড়াশোনা রিলেটেড বিষয়বস্তু নিয়ে লেখা হয়। এটি শুরু করা হয় ২০১৮ সালের মে মাসের দিকে। এই সাইট টি আমার প্রথম ওয়েবসাইট তাই অনেক বাধা বিপত্তি সত্বেও আমি এই সাইটটিকে আমার কাছে রেখে দিয়েছি। আমার লেখা কোনো আর্টিকেল পড়ে যদি আপনাদের ভালো লাগে অথবা মন্দ লাগে তবে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।
ধন্যবাদ সবাইকে।