বাংলাদেশে প্রায় প্রত্যেক গ্রামেই দেশি মুরগী পালন করা হয়ে থাকে। কিন্তু দেশি মুরগীর উৎপাদন ক্ষমতা বিদেশী মুরগির তুলনায় কিছুটা কম। তবে দেশি মুরগীর উৎপাদন ব্যয়ও অনেক কম এবং পাশাপাশি এদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও খুব বেশি।
দেশি মুরগীর মাংস ও ডিমের দাম বিদেশী মুরগীর চেয়ে দ্বিগুণ এবং এর চাহিদাও বাজারে খুব বেশী। তবে দেশি মুরগীর বাচ্চার মৃত্যুহার বাচ্চা বয়সে অনেক বেশি এবং অপুষ্টিজনিত কারনে উৎপাদন তেমন একটা আশানুরূপ নয়।
তাই যদি বাচ্চা বয়সে এদের মৃত্যুহার কমানো যায় এবং সম্পূরক খাদ্যের ব্যবস্থা করা যায় তাহলে দেশি মুরগী থেকে দ্বিগুন পরিমান ডিম ও মাংস পাওয়া যায়।
বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট দেশী মুরগি উৎপাদনের জন্য উন্নত কৌশল ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন করছে। এ কৌশল ব্যবহার করার মাধ্যমে দেশের খামারিরা দেশী মুরগি থেকে অধিক ডিম ও মাংস উৎপাদন করতে পারবে।। পাশাপাশি পারিবারের আয় ও পুষ্টি বৃদ্ধি করতে সক্ষম হবে।একটি গবেষনায় দেখা গেছে যে, দেশি মুরগীর ডিম উৎপাদন বাড়িয়ে বাজারে বিক্রি করার চেয়ে ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা তৈরী করায় লাভ বেশি হয়।
প্রথমে মুরগী গুলোকে কৃমি নাষক ঔষধ খাওয়াতে হবে, তারপরে রানীক্ষেত রোগের টীকা দিয়ে নিতে হবে। মুরগির গায়ে যদি উকুন থাকে তাহলে তাও মেরে নিতে হবে। প্রতিটি মুরগিকে দৈনিক ৫০-৬০ গ্রাম হারে সুষম খাদ্য দেয়া জরুরী।
মুরগির সাথে অবশ্যই একটি বড় আকারের মোরগ থাকতে হবে। তা না হলে ডিম ফুটানো যাবে না । ডিম পাড়া যখন শেষ হবে তখন মুরগি উমে আসবে । তখন আপনাকে ডিম দিয়ে বাচ্চা ফুটানোর ব্যবস্থা নিতে হবে। একসাথে একটা মুরগির নীচে ১০-১২ টি ডিম বসানো যায়। খামারের আদলে বাঁশ, কাঠ খড়, বিচলী তাল নারকেল সুপারির পাতা দিয়ে যত কম খরচে স্থানান্তর যোগ্য ঘর তৈরী করা সম্ভব তা করা যায়।
অনেকেই বর্তমানে দেশী মুরগী পালন করতে চাচ্ছেন এবং সেজন্য ভালো জাতের মুরগীর বাচ্ছা/ছানা কিনতে চাচ্ছেন। তবে কোথায় পাবেন সেটা জানেন না এবং ভালো সাজেশন দেবে এমন কাওকেও পাচ্ছেন না যার কাছে বিস্তারিত জানতে পারবেন খুব ভালো ভাবে।
তাই আমি আপনাদের আমার খুবই পরিচিত এবং কাছের একজন ব্যবসায়ী ভাইয়ের ঠিকানা দিচ্ছি যার কাছ থেকে আপনারা প্রায় সকল ধরনের মুরগী ও হাস পেয়ে যাবেন।
যেমন,
১০ দিন থেকে শুরু করে ৪ মাসের মুরগী, ডিম পারা মুরগী সহ প্রায় সবই পেয়ে যাবেন তার কাছে। এছাড়াও ওনার কাছে আপনারা বিভিন্ন ধরনের হাসের বাচ্চা যেমন চিনা হাঁস, বেইজিং, রানার, খাকি ক্যাম্বেল, ব্লাক হোল ইত্যাদিও পেয়ে যাবেন।
তাদের কাছ থেকে আপনারা ক্যাশ অন ডেলিভারি অথবা নিজে গিয়ে দেখে শুনে বাচ্চা কিনতে পারবেন। যোগাযোগ করতে ফোন করুন এই নম্বরে।
মুরগী উমে বসার পর তার যথেষ্ট পরিচর্যা আবশ্যক। মুরগীর সামনে সব সময় খাবার ও পানি রাখবেন যাতে সে ইচ্ছে হলেই খেতে পারে । এতে বাচ্চা তোলার পর তাড়াতাড়ি ডিম পাড়া আরম্ভ করবে।
মূরগীর ডিমে উমে বসার ৭/৮ দিন পরে বাচ্চা না হওয়া ডিম গুলো সরিয়ে ফেলতে হবে। রাতের বেলা টর্চ লাইট দিয়ে এই ডিম গুলো চিনতে পারবেন খুব সহজেই। কিন্তু খেয়াল রাখবেন যেন মুরগী বিরক্ত না হয়।
প্রতিটি ডিম দৈনিক ৫-৬ বার উল্টিয়ে দিবেন যেন প্রতিটি ডিমের গায়ে সমান ভাবে উম লাগে।
গরম কালে বাচ্চার বয়স ৩-৪ দিন এবং শীত কালে ১০-১২ দিন পর্যন্ত বাচ্চার সাথে মাকে থাকতে দিতে হবে। তখন মুরগি নিজেই বাচ্চাকে উম দিবে। তাই কৃত্রিম ভাবে উমের বা ব্রুডিং করার প্রয়োজন হবেনা।
এ সময় মা মুরগিকে বেশি বেশি খাবার দিতে হবে ও মা মুরগির সাথে বাচ্চার খাবার আলাদা করে দিতে হবে। এতে করে বাচ্চা গুলো তাদের মায়ের সাথে খাবার খাওয়া শিখবে।
উল্লেখিত সময়ের পর মা মুরগী কে বাচ্চা থেকে আলাদা করে দিতে হবে। এই অবস্থায় মুরগীর বাচ্চাকে কৃত্রিম ভাবে ব্রুডিং করাতে হবে ও খাবার দিতে হবে। এরপর মা মুরগিকে আলাদা লেয়ার করে খাবার দিতে হবে। এ সময় মা মুরগীকে জলদি সুস্থ হওয়ার জন্য তরল ভিটামিন দিতে হবে।
মা মুরগি ও তার বাচ্চাকে এমনভাবে আলাদা রাখতে হবে যেন তারা একে অপরকে না দেখতে পায়। এমনকি বাচ্চার চিচি শব্দও যেন মা মুরগি না শুনতে পায়, নাহলে কেউ কোন খাবার বা পানি কিছুই খেতে চাইবে না। আলাদা করার পর অবস্থার সাথে খাপ খাইয়ে গেলে আর কোন সমস্য থাকে না।
মুরগী গুলোকে এই সময় দৈনিক ৮০-৯০ গ্রাম লেয়ার খাবার দিতে হবে এবং ৫-৭ ঘন্টা চড়ে বেড়াতে দিতে হবে। মনে রাখবেন যে, প্রত্যেক ৩-৪ মাস পর পর মুরগীর বাচ্চা ও তার মাকে কৃমির ঔষধ খাওয়াতে হবে এবং ৪-৫ মাস পর পর আর.ডি.ভি. টিকা দিতে হবে।
দেশের বাড়িতে একটি মুরগী ২০-২৪ দিনের মধ্যে ডিম দেয়। এরপর ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানোর জন্য প্রায় ২১ দিন সময় লাগে। সবশেষে বাচ্চা গুলোকে বড় করে তুলতে প্রায় ৯০-১১০ দিন সময় লাগে।
ডিম থেকে এ ভাবে (৯০-১১০ দিন ) বাচ্চা বড় করা পর্যন্ত একটি দেশী মুরগির উৎপাদন চক্র শেষ করতে স্বাভাবিক অবস্থায় ১২০- ১৩০ দিন সময় লাগে। কিন্তু মাকে বাচ্চা থেকে আলাদা করার ফলে বাচ্চা গুলো ৬০-৬২ দিনের মধ্যে বড় হয়ে যায়। এই পদ্ধতিকেই ক্রিপ ফিডিং বলা হয়।
দেশি মোরগ আবদ্ধ ও ছেড়ে দুভাবেই পালন করা যায়। তবে আপনি যদি ছেড়ে পালন করেন তাহলে বেশি লাভবান হবেন কারন মুরগী নিজের খাদ্য নিজেই কুড়িয়ে খায়।
তাছাড়া এরা আলো বাতাস এবং সূর্য কিরণে বেড়ে উঠে যা তাদের শরীরে ভিটামিন ‘ডি’ তৈরি করতে সাহায্য করে। এদের খাবারের জন্য তেমন কোন খরচ করতে হয় না।
বাংলাদেশে মুরগীর বাচ্চা উৎপাদনের জন্য তেমন কোন হ্যাচারি নেই। তাই নিজেই দেখে শুনে ভালো জাতের মোরগ খুঁজে বের করতে হবে ও সংগ্রহ করতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয় যদি ৪০০-৬০০ গ্রামের মোরগ দিয়ে শুরু করেন। এর কারন হল, এই মোরগ গুলো অনেক দ্রুত বাড়ে।
দেশি মুরগীর জন্য চাই খোলামেলা ঘর। দেশি মুরগীর জন্য ১.৫ মিটার লম্বা ,১.২ মিটার চওড়া এবং ১ মিটার উঁচু ঘর তৈরি করতে হবে।
ঘরের বেড়া অথবা দেয়ালে পর্যাপ্ত আলো ও বাতাসের জন্য যথেষ্ট ছিদ্র থাকতে হবে। ঘরের চাল আপনি বাশ, খড় অথবা টিন দিয়ে করতে পারবেন। এরকম একেকটি ঘরে ১০-১৫টি মোরগ অনায়াসে পালন করা যায়।
আপনার বাড়ির নিত্যদিনের বাড়তি বা বাসী খাবার যেমন, এঁটোভাত, তরকারি , গম, ধান, শাক সবজির ফেলে দেওয়া অংশ, লতা পাতা, কাঁকর, পাথর কুচি ইত্যাদি মুরগি কুড়িয়ে খায় তাই ঝামেলা কম।
দেশি মুরগী ছেড়ে পালনের জন্য আসলে তেমন কোনো কষ্ট করতে হয়না। সকালে মুরগী গুলোকে উঠানে ছেড়ে দেবেন আর সন্ধ্যা হলে ঘরে ঢুকিয়ে দেবেন।
ব্যাস, হয়ে গেলো, ওরা সারাদিন খেলা ধুলা করবে আর নিজের খাবার নিজেই খুঁজে নেবে।
কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে যে, মুরগীর পায়খানা যেন ঘরের মেঝেতে লেপ্টে না যায়। এর জন্য ঘরের মেঝেতে ধানের তুষ অথবা করাতের গুঁড়া ২.৫ সে.মি. মোটা করে বিছিয়ে দিলেই হবে। এই পদ্ধতিতে তেমন আহামরি কোন খরচ ছাড়াই আপনি ভালো মুনাফা আয় করতে পারবেন।
মুরগী বাড়ির আশপাশে চড়ে বেড়ায় ও বাড়ির উচ্ছিষ্ট খাবার যেমন পোকামাকড়, কেঁচো, কচি ঘাসপাতা ইত্যাদি খায়। সেদিক থেকে মুরগী পালনের কোনো খরচ নেই বললেই চলে।
তবে আপাতদৃষ্টিতে খুব লাভজনক মনে হলেও আসলে অতটাও লাভ হয় না। ছাড়া মুরগি অন্যত্র ডিম পেড়ে আসে, কখনও রোগে মারা যায়। তাই দেশি মুরগির পালন লাভজনক করতে হলে কিছু নিয়ন্ত্রণ থাকা জরুরী।
প্রথমেই আসি মুরগির জাতের ব্যাপারে।, খামারের ব্রয়লার হাইব্রিড মুরগি উঠোনে ছেড়ে পালন করতে পারবেন না। তাই আপনাকে খাঁটি জাতগুলো বাছাই করে নিতে হবে। যেমন, রোড আইল্যান্ড রেড (আরআইআর) বা ব্ল্যাক অস্ট্রালর্প। রঘুনাথপুর, বালুরঘাটের রাজ্য মুরগি খামারে লাল বা আরআইআর এবং কালো বা ব্ল্যাক অস্ট্রালর্প মুরগির বাচ্চা পাওয়া যায়। ইদানীং কালে বনরাজা, গিরিরাজা, ইত্যাদি জাতগুলোকে কৃত্রিম ভাবে ব্রিড করে তৈরি করা হয়েছে।
মুরগীর ঘর মাটি থেকে সামান্য উপরে বাঁশ বা কাঠ দিয়ে বানাতে পারেন। এতে খুব কম খরচে মুরগীর ঘর তৈরি হয়ে যাবে। মনে রাখবেন মুরগীর ঘর যেন শুকনো ও পরিষ্কার হয় এবং পর্যাপ্ত আলো-বাতাস থাকে। প্রত্যেক মুরগীর জন্য আপনাকে গড়ে প্রায় তিন বর্গফুট জায়গা ধরতে হবে।
রাতে মুরগি রাখার যে ঘর আছে, সেখানে নির্দিষ্ট পাত্রে জল ও খাবার দিতে হবে। যাতে সকালে ঘর থেকে বেরোনো বা পরে ঘরে ঢোকার সময় ওই খাবার ও জল খাওয়া অভ্যাস তৈরি হয়। কারন এই অভ্যাস গুলো থাকলে পরবর্তিতে আপনার ওষুধ গুলে খাওয়াতে সুবিধা হবে।
রোগব্যাধি মুরগি পালনের অন্যতম সমস্যা। তাই নিয়মিত মুরগির ঘর চুন বা জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। প্রতি মাসে একবার করে কৃমিনাশক ওষুধ (পাইপেরাজিন তরল বয়স অনুযায়ী ০.৫-১ মিলি) জ্বলে মিশিয়ে খাওয়াতে পারেন।
দেশি মুরগীর রানিক্ষেত টিকা সবচেয়ে জরুরী। ৭-১০ দিন বয়সে এবং ৩০ দিন বয়সে নাকে বা চোখে এক ফোঁটা করে দিতে হবে। এছাড়াও ২ মাস বয়সে মুরগীকে কৃমির ওষুধ দিতে হবে। আড়াই মাস বয়সে এসে মুরগীর ডানার নিচে ০.৫ মিলির একটি ইঞ্জেকশন অবশ্যই নিতে হবে।
এছাড়া ঝিমুনি, শ্বাসকষ্ট, সর্দি, পাতলা পায়খানা দেখা দিলে সাথে সাথে ব্যাকট্রিম ডিএস বা সেপম্যাক্স খাবারের সাথে অথবা জলের সাথে গুলে খাইয়ে দিতে হবে ৩ থেকে ৭ দিন। মনে রাখবেন, ১টি বড়ি ১০টি বড় মুরগী অথবা ২০টি বাচ্চা মুরগীকে খাওয়াতে পারবেন।
দেশি মুরগী বানিজ্যিকভাবে পালন করলে আপনার সংসারের আয় বৃদ্ধি ও পারিবারিক পুষ্টিতে বিশেষ ভাবে অবদান রাখতে পারে ।
অনেকেই বলেন যে দেশী মুরগীর উৎপাদন ক্ষমতা কম । কিন্তু বিভিন্ন পর্যায়ে বিশেষ লক্ষ্য এবং ব্যবস্থা গ্রহণ করে দেশী মুরগীর উৎপাদন দ্বিগুনের ও বেশী পাওয়া সম্ভব। দেশী মুরগি থেকে লাভ জনক উৎপাদন পওয়ায় বিভিন্ন কৌশল এখানে বর্ননা করা হয়েছে।
ডিম পাড়ার পর ডিম সসংগ্রহের সময় পেন্সিল দিয়ে ডিমের গায়ে তারিখ লিখে ঠান্ডা জায়গায় সংরক্ষন করতে হবে। গরম কালে ৫ থেকে৬ দিন বয়সের ডিম আর শীতকালে ১০ থেকে ১২ দিন বয়সের ডিম ফুটানোর জন্য সবচেয়ে ভালো।
Detailsbd.com একটি মাল্টিনিশ বাংলা ব্লগ সাইট যেখানে মূলত ব্লগিং, ডিজিটাল মার্কেটিং, ব্যবসা, টেকনোলজি, ও পড়াশোনা রিলেটেড বিষয়বস্তু নিয়ে লেখা হয়। এটি শুরু করা হয় ২০১৮ সালের মে মাসের দিকে। এই সাইট টি আমার প্রথম ওয়েবসাইট তাই অনেক বাধা বিপত্তি সত্বেও আমি এই সাইটটিকে আমার কাছে রেখে দিয়েছি। আমার লেখা কোনো আর্টিকেল পড়ে যদি আপনাদের ভালো লাগে অথবা মন্দ লাগে তবে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।
ধন্যবাদ সবাইকে।
অনেক ভালো পরামর্শ আমার জন্য অনেক উপকার হবে ।
খাচায় আবদ্ধ অবস্থা কি পালন করা যাবে ডিম ও মাংসের জন্য
অসংখ্য ধন্যবাদ, আমাদের অন্যান্য আর্টিকেল গুলো পড়ূন
ভাই ফোন নাম্বার তো নেই কোথায় ফোন করবো?
জ্বী অনেকেই পালেন এভাবে, সঠিক পদ্ধতিতে আপনিও পালতে পারেন।
আমি ১০০ টি দেশী মুরগী দিয়ে খামার করতে চাই মুক্ত অবস্থায়। এক জায়গায় এতোগুলা মুরগী রাখলে কি কোনো সমস্যা হবে??
না কোনো সমস্যা হবে না