শাব্দিক অর্থে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট বলতে মূলত কোন ঘটনার যাবতীয় ব্যবস্থাপনাকেই বুঝায়, এর বাস্তবিক ধারণা ও তাই। যেকোনো ঘটনা, অনুষ্ঠান বা কোনো আয়োজন সম্পন্ন করতে সার্বিক যেকোন কার্যক্রম পরিচালনা করাই হচ্ছে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট।
প্রথমে একটি ইভেন্টকে সাজানো এবং পরিশেষে তা পরিচালনা করা কিন্তু চাট্টিখানি কথা নয়। অবিরাম পরিশ্রম, বিনিদ্র সময় এবং বেশ কিছু পরিচালকদের দ্বারা পরিচালিত একটি ইভেন্টে প্রায় সময় ই কিছু ভুলভ্রান্তি হয়ে থাকে। তবে প্রায় তিন বছরে আটটি ইভেন্ট প্রতক্ষ্যভাবে পরিচালনা করার পর আমি কিছু ভুলভ্রান্তি ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলির ইন্টারেস্টিং একটি প্যাটার্ন পর্যবেক্ষণ করতে পেরেছি বলে মনে হয়। এখন যা বলব, ধরে নেবে এই ভুলগুলোই আমি ও আমার টিম মেম্বার রা বেশ কয়েকবার করেছি এবং সত্য বলতেও বেশ সময় লেগেছে আমাদেরকে এ নিয়ে টনক নড়তে।
আসলে কর্মব্যস্ত এ শহরে যেকোনো আয়োজনে পরিবারের সব সদস্যদের এক সাথে একটি দীর্ঘসময়ের জন্য পাওয়া কঠিন। আবার সেই আয়োজন সফল করতে সবার সমন্বিত সহায়তাও গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং এমতাবস্থায় এমন একটি মাধ্যম দরকার যাদের মাধ্যমে আয়োজনও সফল হবে আবার পরিবারের সবাইকে নিয়ে চিত্তবিনোদনও বিঘ্নিত হবে না। আর এমন সব সমস্যার সমাধান করতেই মুলত এই ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ব্যাবসার সূচনা। খাবার দাবার, স্টেজ সাজানো থেকে শুরু করে ফটোগ্রাফি, ভিডিও এডিটিং সবই এখন একটি টিম দিয়েই সম্পন্ন করা সম্ভব। বিয়ে, বৌভাত, গায়ে হলুদ, আকদ,প্রি-ওয়েডিং সহ নানারকম প্যাকেজ এর আওতায় একটি সফল ইভেন্ট আয়োজন করাই সাধারণত এই ইভেন্ট টিম এর কাজ।
আরও পড়ুন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নাহিদ হোসেন বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরু থেকেই ক্লাব এক্টিভিটিস এর সাথে জড়িত। ২১ফেব্রুয়ারী, ২৬ মার্চ থেকে শুরু করে বিভিন্ন দিবসে হরহামেশাই বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করতে হতো নাহিদ দের। হঠাৎ ই বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ হলে চাকরি করবে না ব্যবসা করবে এই চক্রে থাকতে থাকতেই এক বড় ভাই এর পরামর্শে "বিয়েবাড়ি" নামের একটি ইভেন্ট ম্যনেজমেন্ট হাউস খুলে বসে। ক্লাব এক্টিভিটি করার সুবাদে যেহেতু অনেক শ্রেণিপেশার লোকজনদের সাথেই নাহিদদের উঠাবসা ছিলো তাই দ্রুতই নাহিদের "বিয়েবাড়ি" জনপ্রিয় হতে থাকে এবং তার ব্যবসার প্রসার ঘটতে থাকে। এক সময় দেখা গেলো ভার্সিটির শিক্ষক-শিক্ষার্থী কিংবা কর্মকর্তা কর্মচারী দের কাছেও ব্যপক জনপ্রিয় হতে থাকে এই "বিয়েবাড়ি"।
হুম, ইভেন্ট পরিচালনা করা একটি দলগত কাজ বটে । আর এই সহজ ব্যাপারটিকেই ঘিরেই যত ধরনের বাজে প্রস্তুতি হয়ে থাকে। তুমি যদি দলনেতা হও তাহলে প্রথমত একজন-কি দুইজন কে সাথে রাখবে যাদের তুমি যেকোনও কাজ দিয়েই ভরসা করতে পারো। তবে এটা প্রথম পদক্ষেপ। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে স্বজনপ্রীতি বেশ ভয়ংকর রকমের বস্তু । তাই বলে রাখি, ইভেন্ট পরিচালনা করা মাত্রই বন্ধুত্বকে দূরে সরিয়ে রাখতে হবে। কারণ, তুমি যখন একটি বড় উদ্দেশ্যকে হাতে রেখে কাজে নামছো, যেখানে প্রত্যেককেই যার যার কাজে পারদর্শী হওয়া জরুরি ।
তবে আমি যখন সর্বপ্রথম ইভেন্ট আয়োজন করি তখন আমার দলের প্রত্যেকেই ছিল আমার অত্যন্ত কাছের বন্ধু এবং বান্ধবী । তারা ইভেন্ট এ আদৌ কাজ করতে পারবে কিনা বা পারলেও কতটুকু করতে পারবে কীভাবেই বা করবে- এ নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে আমি টিম গঠন করেই যাচ্ছিলাম। যার প্রতিফলন হয় করুন। মোদ্দা কথা, ওই ইভেন্টটি ছিল রীতিমতো যাচ্ছেতাই ধাচের। কয়েকদিন কী ভুলগুলো করেছি ভাবতে ভাবতে বুঝে যাই যে ভুলটি সমানতালে প্রত্যেকেরই ছিল যারা নিজেদের সক্ষমতা নিয়ে বিশেষ কিছু জানত না।
মাসিক আয় সাধারণত প্রতিষ্ঠানসাপেেক্ষ হয়। মাসিক চুক্তির ক্ষেত্রে একজন ইভেন্ট ম্যানেজারের আয় মাসে প্রায় ২০ হাজার টাকার মতো হতে পারে।
তবে কিছু ক্ষেত্রে অনুষ্ঠানের লাভের উপরও নির্ভর করে সম্মানি পাওয়া যায়। এটি অনুষ্ঠান বা প্রজেক্টসাপেেক্ষও হয়। অর্থাৎ একটি অনুষ্ঠানের আকার ও সংখ্যা যত বড় হবে, সম্মানির পরিমাণও সে অনুযায়ী বেশি হতে পারে । সাধারণত একটি অনুষ্ঠান থেকে লাভাংশের ৪০ শতাংশ সম্মানি দেয়া হয়। যোগাযোগের দক্ষতা ও নেটওয়ার্কিং ব্যবহার করে অনুষ্ঠান ব্যবস্থাপনার চুক্তি এনে দিতে পারলে এর চেয়েও বড় লভ্যাংশ অর্জন করা সম্ভব হয়।
একজন ইভেন্ট ম্যানেজার সাধারণত বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেন। এক সময় শুধু প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ের অনুষ্ঠানের জন্য এ পেশার ব্যাপক চাহিদা ছিলো। কিন্তু বর্তমানে মানুষের ব্যস্ততা বেড়ে যাওয়ায় ব্যক্তিগত অনুষ্ঠানের জন্যও দিন দিন ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের কাজের সুযোগ তৈরি হচ্ছে ।
অভিজ্ঞতাহীন বা কম হলে সাধারণত জুনিয়র ইভেন্ট এক্সিকিউটিভ হিসাবে ক্যারিয়ার শুরু হতে পারে । তবে পরবর্তীতে পারফরম্যান্সের উপর ভিত্তি করে ইভেন্ট এক্সিকিউটিভ, হেড অফ ডিপার্টমেন্ট (যেমন, হসপিটালিটি বা কোঅরডিনেশন), বা প্রজেক্ট ম্যানেজার হিসাবেও কাজ করতে পাবেন।
ইভেন্ট ম্যানেজার হিসাবে ৭ থেকে ১০ বছরের বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জনের পর প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার হিসেবেও নিযুক্ত হতে পারেন।
আবার অনেকে অভিজ্ঞতা অর্জনের পর নিজ উদ্যোগে ইভেন্ট ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান খুলে ফেলেন যা খুবই ইতিবাচক।
ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট পেশায় আয় ও বেতনের অঙ্কটাও যথেষ্ট । শুরুতেই আপনি ১৫-২০ হাজার টাকা দিয়ে এ পেশায় ক্যারিয়ার শুরু করতে পারেন। এর পর অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বেতন বাড়তে থাকে । খন্ডকালীন চাকরিতে ৬ থেকে ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত সহজেই রোজগার করা সম্ভব হয়। ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট নিজস্ব ব্যবসা হলে এর আয় অনেকটাই নির্ভর করে বিনিয়োগ, কাজের সংখ্যা ও পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে । তবে খুব অল্প পুঁজি বিনিয়োগ করেও আপনি প্রথম দিকেই প্রতি মাসে আয় করতে পারেন প্রায় ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা।
ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের জন্য আছে প্রচুর কাজের ক্ষেত্র। কর্মক্ষেত্রে ব্যস্ততা বেড়ে যাওয়ায় আমাদের দেশে দিন দিন এই ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের চাহিদা বাড়ছে। প্রাতিষ্ঠানিক আয়োজনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ব্যক্তিগত ও বিভিন্ন উৎসবীয় আয়োজন। তাই এ কাজে আয়টাও বেশ ভালো। প্রায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই এখন সব ধরনের আয়োজনে সাহায্য নিচ্ছে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান গুলো র। এমনকি বড় বড় ফার্ম গুলো নিজস্ব ইভেন্ট আয়োজনের জন্য নিজস্ব বিভাগই চালু করেছে। বর্তমানে ঢাকার বাইরেও বেশকিছু ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ফার্ম গড়ে উঠেছে। আর এসব প্রতিষ্ঠানের মোট বিলের ৫০ শতাংশ টাকাই অগ্রিম পরিশোধ করতে হয় এবং অবশিষ্ট টাকা অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর পরিশোধ করতে হয়। নতুনত্ব, সৃজনশীলতা, আধুনিকতা, সচেতনভাবে গ্রাহকের চাহিদা ও বাজেটের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ফার্মগুলো তাদের কাজ করে থাকে।
তাই আসুন জেনে নিই ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ন তথ্য
তাই এমন একটি দল গঠন করতে হবে যেখানে সবাই আত্মবিশ্বাসী এবং দলগত কাজে দারুণ বিশ্বাসী। দলগঠনটি ইভেন্টের তারিখ হতে কমপক্ষে ৬ থেকে ৭ মাস আগে হতে হবে এবং দলগঠনের জন্য অবশ্যই, অবশ্যই উক্ত সংগঠনের মডারেটরকে সাথে রাখতে হবে। নতুবা বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়ে থাকে । আমি আমার ব্যক্তিগত জায়গা ছাড়াও অনেক ইভেন্টে দেখেছি যে,যেখানে অসংখ্য ভলান্টিয়ারএবং ইভেন্ট পরিচালকরা কাজ করছে। এমনকি তারা সংখ্যায়ও প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি। ফলে কেউ কেউ স্বেচ্ছায় দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে এবং বাকিরা আনন্দ করছে দর্শকদের মতো। এটা হাস্যকর নয়, তবে সত্যি।
ইন্টারভিউ নেয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ এই অর্থে যে, একটি দলের বিভিন্ন ধরনের কাজ, যেমন পাবলিকেশন করা , ভবনের ফ্লোর-ইনচার্জ থাকা , প্রশ্নপত্র তৈরি করা, ফলাফল লিপিবদ্ধকরণ করা, আইটি দল ইত্যাদি সার্কাসের দড়িতে ভারসাম্যের খেলা দেখানো লোকটির মতো। যে কোন একটি ভারসাম্য হারিয়ে ফেললেই খেলার সমাপ্তি ঘটে। তাই অনভিজ্ঞ মানুষের একটি দলে কোনও অবস্থান নেই। প্রত্যেককে হতে হবে দক্ষ, আগ্রহী এবং দলনেতা হিসেবে সবার ভেতরেই ক্রিয়েটিভিটি থাকা অত্যবশ্যক একটি খোঁজ হবে তোমার বা তোমাদের জন্য।
ভেবে দেখ, একটি দলের সবারই যখন চারিদিকে মাথার ভেতরে অনেকগুলো উদ্দেশ্য থাকে , কাজ নিয়ে যখন ছড়িয়ে পড়ে, তখন একে-অপরকে দেখার সুযোগ থাকে খুবই সামান্যই। তাই ইভেন্টে অনেকসময় ভুল হয়ে যায়, সবকিছুই সবসময় আশানুরূপ নাও হতে পারে । তাই ব্যাক-আপে প্ল্যান এর প্রয়োজন হতেই পারে। তাই ইভেন্ট পরিচালনার জন্য সর্বক্ষণ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকটি হচ্ছে কমিউনিকেশন । আর এখানেই নির্ভর করে একটি ইভেন্ট সফল হবে কি না।
প্রত্যক ডিপার্টমেন্ট বা সেক্টর হতে হবে অন্য সব সেক্টরের সাথে ইন্টারকানেক্টেড। তাই যেকোনও সময় এক ডিপার্টমেন্টের পরিচালকের অন্য ডিপার্টমেন্টের পরিচালককে ব্যবহার করতে হতে পারে। যেমন- যে প্রশ্নপত্রের ব্যাপারটি দেখছে, তার সাথে সব ফ্লোর ইনচার্জের যোগাযোগ থাকা দরকার হতে পারে।
তাই আমার প্রথম ইভেন্ট ছাড়াও অধিকাংশ ইভেন্টেই আমি দেখেছি একেকজন ম্যানেজারদের মধ্যে একএকপ্রকার অস্থিরতা কাজ করে, কখনো কখনো অসংলগ্নতাও কাজ করে যেন অনুষ্ঠানের সবকিছুই তছনছ করে ভেঙে পড়েছে। কেউ কেউ একে-অপরকে খুঁজে বেড়াচ্ছে নিজের আসল কাজটি নিজ অজান্তেই ফেলে রেখে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে আবার কাঙ্ক্ষিত মানুষটিকেই পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে কেউ রিপোর্ট করতে পারছে না। একজন আরেকজন কে বলছে অমুককে খুঁজে দাও, আবার তমুক বলছে ওই মানুষটিকে আমার অমুক বার্তাটি দিয়ে এসো। এভাবেই একটি বিরাট আকারের কমিউনিকেশন গ্যাপ হয়ে দাঁড়ায়। সমাধান- ওয়াকি টকি। তবে এখানেও একটা ব্যাপার আছে। ওয়াকি-টকিতে কথা বলারও একটি নির্দিষ্ট ধরনের ভাষা আছে। আছে নির্দিষ্ট কিছু ভংগিও। কিছু নিয়মও আছে যা আমরা অনেকেই হয়তো জানি না। একে বলা হয় রেডিও কমিউনিকেশন (Radio Communication)।
ওয়াকি-টকি অবশ্য এখন বেশ অল্প অর্থের বিনিময়ে ভাড়া করা যায়। আগের মতো এগুলো এখন এতটা ব্যয়বহুলও নয়। আমি প্রায়ই লক্ষ করি যে স্কুল-কলেজ পর্যায়ে যারা ইভেন্ট চলাকালীন অবস্থায় ওয়াকি-টকি টি ব্যবহার করে, তারা একদমই প্রফেশনালি তা ব্যবহার করেন না। এতে অবশ্য তাদের কোন দোষও নেই। কারণ একজন দলনেতা হিসেবে আপনাকে অবশ্যই ওয়াকি-টকিতে যোগাযোগ করার পন্থাগুলো, নিয়মগুলো সবার সামনে খোলাসা করে বলতে হবে। এজন্যই ইভেন্ট শুরু হবার ২ থেকে ৪ দিন আগেই ম্যানেজিং দলের জন্য রেডিও কমিউনিকেশন ওয়ার্কশপের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
আবার ওয়াকি-টকি ব্যবহারের একটি অসুবিধা হচ্ছে যখন কোন একজন এতে কথা বলে, বাকিরা সব ওয়াকি-টকিতে তখন কথা বলতে পারে না। অর্থাৎ একই সময়ে একবারে শুধু একজনই কথা বলতে পারে আর বাকিরা তখন কেবলই শুনতে পায়। কিন্তু ঠিক ঐ মুহূর্তে যদি মাইক্রোফোন এর বোতামে কেউ চাপ দেয়, এতে তখন যে কথা বলছে তার লাইনটি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কাজেই রেডিও কমিউনিকেশন ব্যবস্থা কিন্তু ফোনের মতো নয়। এর যোগাযোগ করার নিয়ম সম্পূর্ণই আলাদা। তাই একটা ধারণা দিই। ওয়াকি-টকিতে শব্দ ফোনের তুলনায় কিঞ্চিৎ অস্পষ্ট হয়ে থাকে । ফলে বিস্তারিতভাবে কথা বলার সুযোগ কম। তবে এই ক্ষেত্রে অল্প কিছু শব্দ এবং কিছু কোড ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহার করে সাধারণত কথা বলতে হয়। রেডিও কমিউনিকেশন সাধরণত হয়ে থাকে ইংরেজি ভাষায়।
একবার ঢাকার একটি স্বনামধন্য কলেজের একটি ইভেন্টে গিয়ে চমৎকার কিছু অভিজ্ঞতা হয় আমার। জীবনে এই প্রথম এমন কোন একটি ইভেন্টে গিয়েছিলাম, যেখানে আমি দেখি কেবল কিছু ইভেন্ট পরিচালকদের এবং একজন জেনিটরকে যে কাজ না পেয়ে রাগ ভৈরবে বাঁশি বাজাচ্ছিলেন। মেহমান ছিলেন বড়জোর দশ থেকে বিশ জন।বিরাট এই ক্যাম্পাসে খালি চেয়ারের সারির কয়েকটিতে বসে আছেন আর সময় গুনছেন। হ্যাঁ, রীতিমতো এটা টর্চারই বটে।
পরে অবশ্য জানা যায় এই ইভেন্ট সবদিক দিয়েই সুন্দর হতে পারতো। কিন্তু ভুল হয়ে গেছে! কেউই এই ইভেন্টটিকে মার্কেট করেনি। বিজ্ঞাপন দেয়নি। ফলে কেউ জানত না যে এখানে একটি ইভেন্ট চলছে। আসল কথা হচ্ছে একটি যখন কোন কোম্পানি তোমার এই ইভেন্টের ওপর তাদের অর্থ বিনিয়োগ করে, নিজেদের বিজ্ঞাপন দেখানোর একটি পথ হিসেবে তারা তোমার এই অনুষ্ঠানটিকে বেছে নেয়। ফলে সেই কোম্পানির কাছে তুমি দায়বদ্ধ থাক। তাই তাদের টার্গেট মার্কেটের কাছে পৌঁছানো তোমারই কর্তব্য। এজন্য তোমাকে অবশ্যই প্রচুর মানুষ জড়ো করতে হবে তোমার অনুষ্ঠানে।
যেমন: ফেস্টুন,পোস্টার, ব্যানার ইত্যাদি বাদেও সোশাল মিডিয়া হয়ে দাঁড়িয়েছে ইভেন্ট ব্র্যান্ডিংও এর সবচেয়ে কার্যকরী পথ। তাও অনেকে কাঙ্ক্ষিত সংখ্যক জনগ্য কাছে তাদের ইভেন্টের বার্তা পাঠাতে অক্ষম হয়ে থাকে । এক্ষেত্রে প্রয়োজন হয় মিডিয়া পার্টনারের। কোনও নিউজপেপার বা রেডিও চ্যানেল এবং সবচেয়ে ভাল হয় টেলিভিশনেই যদি নিজেদের ইভেন্টের চুম্বক অংশ কে আকর্ষণীয়ভাবে তুলে ধরা যায়। এছাড়াও বেশ কয়েকটি সৃজনশীল উপায়েও তুমি নিজের বিজ্ঞাপন চালিয়ে যেতে পারো।
ফেসবুকেও এখন নিজের ইভেন্ট এর পেইজ খোলা যায়। তবে সবচেয়ে বেশি গতানুগতিকভাবে বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয় শেয়ার করার মাধ্যমে। এর প্রয়োজনও আছে। তবে সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ হবে যদি এই ইভেন্ট পেইজটিকে মনেটাইজ করা যায় । অর্থাৎ টাকা দিয়ে বিজ্ঞাপনের দায়ভারটি ফেইসবুকের ঘাড়েই চাপিয়ে দেয়া। টাকার বিনিময়ে যেকোনও পেইজের বিজ্ঞাপনই দেয়া যায়। ইভেন্ট বাজেটের একটি অংশ এই মার্কেটিং এর জন্য বরাদ্দ থাকতে পারে। ফেসবুকই তোমার ইভেন্টের টার্গেট অরডিন্য়েন্সের কাছে অতি অল্প সময়ের মধ্যে পৌঁছাতে পারবে।
যেমন: ধর তুমি চাও ঢাকার এর অমুক ২৫টি স্কুল থেকে শিক্ষার্থী রা আসুক তোমার ইভেন্টে। ফেইসবুকেই ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে টাকা প্রদানের ফলে উক্ত ২৫টি স্কুল যাদের ফেইসবুক টাইমলাইন এ, education-এ দেয়া আছে, তাদের সকলেরই নিউজ ফিডে চলে যাবে এই মেসেজ ।এমনকি তারা সবাই তোমার ইভেন্ট পেইজটি দেখতেও পারবে। এছাড়াও নিজস্ব হ্যাশট্যাগও ব্যবহার করতে দেখতে পারো।
ব্যান্ড পারফরম্যান্স এ সবাইকে একটি ইভেন্টে আসতে অনেকাংশেই বাধ্য করে থাকে । ফলে কনসার্টও আয়োজন করে দেখতে পারো। যদিও এটি বেশ ব্যয়বহুল বটে । তবুও ব্র্যান্ডিং-এর জন্য এর থেকে ভাল কোন পথই ভাবা যায় না। যেসকল পাবলিক স্পিকাররা অথবা প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ সেখানে থাকবেন, তাদের উপস্থিতিও ইভেন্ট পেইজে জানিয়ে দাও। এছাড়াও উক্ত ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত সোশাল মিডিয়া প্রোফাইল থেকেও তা জানিয়ে দিতে বলো। এতে সকলে আরো আগ্রহী হতে পারে ।
প্রোমো ভিডিও তৈরি করতে পার। ভিডিও এর একটি সুবিধা হলো এটি সব যায়গায় শেয়ার করা যায়। প্রোমো ভিডিও অনেকটা একটি ছবির ট্রেইলারের মতো হয়ে থাকে । কী হতে যাচ্ছে তার একটি ঝলক থাকে একটি ধারণা দেয়ার জন্যে। অবশ্যই, এ ভিডিওটি ইন্টারেস্টিং হতে হবে। দর্শনার্থীদের জন্য একটি সহজবোধ্য অনুষ্ঠান
তোমার ইভেন্ট পেইজে তুমি আগেই সব জরুরি তথ্য দিয়ে রেখেছো। সবাই তা করেও বটে। তবে যারা প্রোগ্রামে আসে, তারা প্রত্যেকেই এই তথ্যের ব্যপারে ওয়াকিবহালও নয়। ফলে এটি প্রায় প্রত্যেকটি ইভেন্টেই দেখা যায়, যে ভিজিটররা এসে ভলান্টিয়ারদের, অথবা ম্যানেজারদের এটা-ওটা জিজ্ঞেস করছে। কিন্তু সমস্যাটা হচ্ছে এখানেই, তখন অনেক ভলান্টিয়ার ইভেন্ট সম্পর্কে অনেককিছু জানে না। আমতা আমতা করে তারা অথবা ভিজিটরদের তারা এড়িয়ে যায়। এটাও এক ধরনের কমিউনিকেশন গ্যাপ হতে পারে ।
ইভেন্টে একটি অথবা কয়েকটি রেজিস্ট্রেশন বুথ থাকতে পারে। সাধারণত দুইজন অথবা তিনজন প্রতিটি টেবিলে রেজিস্টারের কাজ করেন। কিন্তু তুমি সেখানে একজন ভলেন্টিয়ার বেশি বসিয়ে রাখতে পারো যে কোন ইভেন্ট কখন হবে, কত নম্বর ফ্লোরে হবে , কত নম্বর রুমে হবে, কোথায় রেস্টরুম, যাবতীয় তথ্য প্রদান ছাড়াও ভিজিটরদের অনুষ্ঠান বিষয়ক যেকোনও সমস্যা সমাধান করতে পারবে এবং প্রয়োজনে উক্ত ভিজিটরকে সাহায্য করার জন্য ভলান্টিয়ার পাঠিয়ে দিতে পারে । অতএব, যে এইসব তথ্যগুলো প্রদান করবে, তার অধীনে কমপক্ষে তিনজন ভলান্টিয়ার থাকবে যারা সময়ের সাথে সাথে প্রদত্ত কাজ সম্পন্ন হয়েছে কিনা তা রিপোর্ট করতে পারবে।
তার মানে কিন্তু এই নয় যে, সবাই রেজিস্ট্রেশন বুথেই আসবে তাদের নানারকমের জিজ্ঞাসা নিয়ে। ভেন্যুর দেয়ালে দেয়ালে সব তথ্য ধরনের তথ্য বাদেও প্রত্যেক ম্যানেজার ও ভলান্টিয়ারকে সেদিনের অনুষ্ঠানে কী কী হচ্ছে, সেই স্পষ্ট ধারণা থাকাই চাই। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ভিজিটরদের একটি সহজবোধ্য, সংশয়হীন অনুষ্ঠান উপভোগ করার সুযোগ করে দেয়া।
প্ল্যান B
ওপেনিং প্রোগ্রাম চালু হয়ে গেছে। প্রতিষ্ঠানের সঙ্গীতদল জাতীয় সঙ্গীত দিয়ে শুরু করতে চাচ্ছে অনুষ্ঠান। কিন্তু কে তোমাকে সেই আশ্বাস দেবে যে সঙ্গীতদলের হারমোনিয়াম বাদক অনুস্ঠান দিন অসুস্থ হয়ে পড়বে না? কে এই অভয় দিয়ে বলবে যে ঐদিন ৪টি মাইকের ৩টিই নষ্ট থাকতে পারে না? আমি মোটেও তোমাকে এই ভয় দেখাচ্ছি না বা ভয়ে ভয়ে অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করতে বলছিও না। আমরা এটা ভাল করেই জানি যে, যেকোনও সময় যেকোনও কিছু পরিকল্পনার বাইরে হয়ে যেতেই পারে। তখন যদি একটি প্ল্যান ব বা বিকল্প না থাকে তবে ত মুশকিলে তোমাকে পড়তেই হবে।
চল, ধরে নিই যে সত্যি সত্যিই হারমোনিয়াম বাদক অসুস্থ হয়ে পড়েছে। কিংবা মাইক আসলেই নষ্ট। তোমার কাছে কি একটি প্রি-রেকর্ডেড জাতীয় সঙ্গীতের অডিও ফাইল আছে? যা তুমি ঐ অবস্থাতেই স্পিকার দর্শকদের শোনাতে পারবে? যা কারোর না কারোর ক্ষেত্রে থাকতে পারে। তবে আমি দাবি করে বলতে পারি যে, অধিকাংশ ইভেন্টেই তাড়াহুড়া করে পরিকল্পনা করে বলে অনেক পরিচালকরাই সবকিছুর জন্য বিকল্প প্ল্যান রাখে না। যে কোনও ভুল হলে যেখানে তাদের সাথে সাথে একটি সমাধানে পৌঁছানো কথা, সেখানে সমগ্র ইভেন্টটি হয়ে যাচ্ছে সম্পুর্ন বিশৃঙ্খলাপূর্ণ।
তাই আগেই বলেছি যে, কাজের সব ক্ষেত্রে বা ডিপার্টমেন্ট একটি অপরটির সাথে সম্পর্কযুক্ত ডিপার্টমেন্ট প্রধান নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রত্যকের দু’টি জায়গায় পারদর্শিতা থাকতেই হবে। এর একটি প্রাইমারি এবং পরেরটি হতে হবে সাবসিডারি। অর্থাৎ, প্রথমত তাকে ভাল করে জানতে হবে তার নিজস্ব ক্ষেত্রটি যানতে হবে কাজটি সম্পর্কেও। দ্বিতীয়ত তাকে বিকল্প একটি কাজও জানতে হবে। সম্ভাবনাও আছে, যে ইভেন্টে কোনও এক ডিপার্টমেন্ট এর এক পরিচালক তার কাজের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে এবং এখন তার ব্যাক-আপ প্রয়োজন আছে যা কেবল ভলান্টিয়ারদের দিয়ে সম্ভব না। তাই তার প্রাইমারি কাজের সাথে অন্য যে পরিচালকের সাবসিডারি কাজ মিলে যায়, সে তখন এগিয়ে আসতে পারে অনুষ্ঠানটিকে একটি ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে বাঁচিয়ে তোলার জন্য। তাই জরুরিভিত্তিতে বাহির হবার পথ নিশ্চিত করা
সবারই মূল আকাঙ্ক্ষা থাকে একটি ইন্টারেস্টিং ইভেন্ট, যেখানে তারা সবকিছু কেই যেন উপভোগ করতে পারে। ভিজিটরদের আনন্দ কে উদ্ভাসিত না করতে পারলে ঐ ইভেন্টের এককভাবে কোনও গুরুত্ব থাকে না ।
আপনার অনুষ্ঠানের খাবারে আয়োজন থেকে শুরু ই আলোকসজ্জা পর্যন্ত সব কিছুতে সাহায্য করবে আসলে তারাই। কিন্তু বুকিং এর আগে কিছু ব্যাপার বুঝে নেয়া কিন্তু খুবই জরুরীঃ
প্রথমত আপনি একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের কাছে ঠিক কি কি চাচ্ছেন তা আগেই ঠিক করে নিতে হবে। যেমন ধরুন কেমন আলোকসজ্জা হতে হবে, কি ধরনের খাবার থাকবে, কতজন মানুষ কে নিয়ে আয়োজন, এসব বোঝাপড়া আগে থেকেই স্পষ্ট থাকতে হবে আয়োজক ও ব্যবস্থাপক উভয় পক্ষের মধ্যে।
জীবনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়কে ঘিরে যে অনুষ্ঠানের আয়োজন, তার প্রতিটি মুহূর্তকে নিখুঁতভাবে ফ্রেমবন্দী করে রাখতে চায় আপনি আনি আমরা সবাই। তাই অনুষ্ঠানের ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি ফটো তোলার কাজটিও করছেন এসব প্রতিষ্ঠানের পেশাদার ফটোগ্রাফাররা। তবে ফটোগ্রাফারের জন্য কেমন খরচ পড়বে তা আগে থেকে জেনে নেয়াই ভালো।
অনুষ্ঠানের সপ্তাহখানেক আগেই এসব প্রতিষ্ঠানকে বুকিং দিয়ে তার কাজটি বুঝিয়ে দিন। তাহলে খুঁটিনাটি বিষয়গুলো খেয়াল রেখেই তারা তাদের কাজটি করবে, আর প্রতিষ্ঠানগুলোও অনুষ্ঠান নিয়ে তাদের নতুন ধারণা বাস্তবায়নের সুযোগটুকু পাবে।
এখন বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক এমনকি ব্যক্তিগত অনুষ্ঠানগুলোও সঠিকভাবে পরিচালনা, সুন্দর এবং রুচিশীল করতে বর্তমানে অনেকেই ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের কাছে ছুটে যান।
আসলে সুন্দর ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে যেকোনো আয়োজনকে সম্পন্ন করার যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করাই হচ্ছে মুলত ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট। বিয়ে, জন্মদিন, মেলা, ফ্যাশন শো, অফিসিয়াল মিটিং, সেমিনার,ওয়ার্ক শপ এর মতো আয়োজন ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সম্পন্ন করতে পারে। মানুষের কর্মব্যস্ততা বেড়ে যাওয়ায় আমাদের দেশে দিন দিন ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টর চাহিদা বেড়েই চলেছে । বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এ সেক্টরটি ভবিষ্যতেও প্রসারিত হবে।
নিঃসন্দেহে বলা চলে যে, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট পরিচালনা করা একটি চ্যালেঞ্জিং পেশা। তবে এখানে রয়েছে নিজেকে প্রমাণের যথেষ্ট সুযোগ এবং প্রচুর কাজ করার ক্ষেত্র।তাই সবদিক থেকে বিবেচনা করে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট এখন পেশা হিসেবে যথেষ্ট লোভনীয় হয়ে উঠেছে।
"লেখাটি ভালো লাগলে একটি কমেন্ট করে আপনার মতামত জানানোর অনুরোধ রইল, ধন্যবাদ।"
Detailsbd.com একটি মাল্টিনিশ বাংলা ব্লগ সাইট যেখানে মূলত ব্লগিং, ডিজিটাল মার্কেটিং, ব্যবসা, টেকনোলজি, ও পড়াশোনা রিলেটেড বিষয়বস্তু নিয়ে লেখা হয়। এটি শুরু করা হয় ২০১৮ সালের মে মাসের দিকে। এই সাইট টি আমার প্রথম ওয়েবসাইট তাই অনেক বাধা বিপত্তি সত্বেও আমি এই সাইটটিকে আমার কাছে রেখে দিয়েছি। আমার লেখা কোনো আর্টিকেল পড়ে যদি আপনাদের ভালো লাগে অথবা মন্দ লাগে তবে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।
ধন্যবাদ সবাইকে।
osadharon
thanks a lot brother