ফ্রিল্যান্সিং বলতে আমরা সাধারণত ঘরে বসে অনলাইনে কাজ করে আয় করাকেই বুঝায়। আপনি মুলত অনলাইনে যেসব কাজ করতে দক্ষ, সেইসব কাজ অনলাইনে করে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা আয় করতে পারবেন। এর মানে আপনার অনলাইন কাজ করার দক্ষতা অনলাইনেই বিক্রি করে আয় করাকেই ফ্রিল্যান্সিং বলা হয়।
ইউনিভার্সিটির ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী রিফাত এর একাডেমিক রেসাল্ট যথেষ্ট খারাপ হলেও তা নিয়ে রিফাত এর থোরাই কেয়ার। গ্রাজুয়েশন শেষ হলে সহপাঠীদের যখন ক্যারিয়ার নিয়ে নাজেহাল অবস্থা, রিফাত তখন নিশ্চিত ঘুমের রাজ্যে শায়িত।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান এ স্নাতক করা শিহাব ২ বছর বেকারত্বের গ্লানির অবসান হঠাৎ ঘটে যুব উন্নয়ন সংস্থার ৬ মাসের প্রশিক্ষণে।
মালিহার নতুন সংসারে তেমন কাজ না থাকায় নতুন এক অভিজ্ঞতার সাথে পরিচয় হতে হয় তার।
রিফাত,শিহাব আর মালিহার গল্প টা আসলে একই।ফ্রিলেন্সিং এর কল্যাণে তাদের তিন জনের ই ভাগ্যের চাকা পরিবর্তন হয়।বর্তমান সমাজে অনেক যুবকই ফ্রিল্যান্সিং এর বদৌলতে পরিবার ও সমাজের অবদান রাখতে পারছে।জিডিপি তে তাদের অবস্থান এখন অনেকটাই শক্ত।
ধরা যাক আপনি ভাল একাউন্টিং এর কাজ করেন। রাশিয়ার এক ক্লায়েন্টের কোম্পানির ২৫ দিনের একাউন্ট অডিট করে দিতে হবে। সে অনলাইনে একটা প্ল্যাটফর্মে অর্ডার প্লেস করল। অনেকের মত আপনিও অ্যাপ্লাই করলেন। আপনি ই কাজটা পেলেন। একটা এমাউন্ট এর পেমেন্টে চুক্তিবদ্ধও হলেন। কাজটা আপনি ই আপনার দক্ষতা দিয়ে সম্পন্ন করলেন, অনলাইনের মাধ্যমে আপনি সেটা ডেলিভার করলেন, ক্লায়েন্ট ও আপনাকে পেমেন্ট অনলাইনের মাধ্যমে দিয়ে দিল।
এখন দেখতে হবে যে আপনি আসলেই ফ্রিল্যান্সিং করে আয় করার জন্য মানুসিক ভাবে প্রস্তুত কিনা।কম্পিউটার, ইন্টারনেট ব্যবহার এর প্রতি আপনার আগ্রহ আছে কি না।
সব গুলো প্রশ্নের উত্তর যদি হ্যাঁ হয় তবেই ফ্রিল্যান্সিং এর জগতে আপনাকে স্বাগতম।
এক্ষেত্রে দুই শ্রেণির মানুষ এর সংযোগ ঘটে। এক, অর্ডার দাতা বা বায়ার আর দুই অর্ডার গ্রাহক বা ফ্রিল্যান্সার ।তাদের দুই জন এর মধ্যে কাজ এর সাথে পারিশ্রমিক এর মিল হলে তবেই ফ্রিল্যান্সার রা কাজে নেমে পড়ে এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্দিষ্ট কাজ টি বায়ার কে বুঝিয়ে দিতে হয়।
ফ্রিল্যান্সার হতে হলে সবচেয়ে বেশি যে গুণ থাকা দরকার, তা হল নিজ থেকেই কাজ বুঝে নেয়ার ক্ষমতা। কারন একমাত্র নিজে নিজে যদি শিখতে পারেন তাহলে আপনি ফ্রিল্যান্সিং এ সফল হবেন।
আপনি হয়ত মার্কেট থেকে ভালো দামের একটা কোর্স করলেন অথবা টিওটিরিয়াল দেখে দেখে অনেক কিছু শিখলেন। কিন্তু এখানেই আপনার শেখার শেষ না, আপনাকে কাজের সাথে সাথে আরও অনেক কিছু শিখে নিতে হবে যা আপনাকে নিজে নিজেই শিখতে হবে।
ধরুন আপনার একজন ক্লায়েন্ট আপনাকে একটি ওয়েবসাইট বানিয়ে দিতে বলল, এখন সে চায় যে তার ওয়েবসাইটের জন্য একটি মোবাইল এপ ও বানাতে। তখন আপনাকে মোবাইল এপ বানানোর কাজটিও ধীরে ধীরে শিখে নিতে হবে অথবা কাওকে দিয়ে করিয়ে নিতে হবে।
এখন আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে যে ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শিখবো এবং কোথায় শিখবো। ফ্রিল্যান্সিং শেখার অনেক উপায় আছে তার মধ্য থেকে আপনি কিভাবে শিখবেন সেটা আপনাকেই ঠিক করে নিতে হবে।
তবে হ্যা, ফ্রিল্যান্সিং শিখতে হলে সবার আগে আপনাকে কোনো একটি কাজ শিখতে হবে যা দিয়ে আপনি ফ্রিল্যান্সিং করতে চান। যেমন গ্রাফিক্স ডিজাইনিং, ওয়েব ডিজাইনিং, ওয়েব ডেভলপমেন্ট, এন্ড্রয়েড এপ ডেভলপমেন্ট ইত্যাদি।
আপনাকে সবার আগে শিখতে হবে কাজ, তারপরই না আপনি ফ্রিল্যান্সিং করবেন। কাজ না শিখে আপনি কাজ করতে যাবেন কি দিয়ে?
বলে রাখা ভাল যে ফেসবুক , ব্লগ, ইউটিউব এবং অনেক ক্ষেত্রে ফ্রি প্রশিক্ষণ এর মাধ্যমে অনেক সফল ব্যক্তিই ফ্রি-মেন্টরিং করছে বাংলাদেশে। 10 Minute School এ অনেক ফ্রি কোর্স আছে, যা শিখে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করা যাবে।
এছাড়া অনেক ওয়েবসাইট আছে যেখানে ফ্রিল্যান্সিং এর উপর পেইড কোর্স পেয়ে যাবেন। চাইলে সেখান থেকেও শিখে নিতে পারেন।
একটু ভাবুনতো, আপনাকে সফল হওয়ার পথ সে-ই বাতলে দিতে পারবে, যে নিজে ঐ কাজে সফল। কিন্তু যে নিজে কাজ করেনা বা করতে চায় না সে কি করে আপনার ট্রেইনিং দিতে পারবে?
আবার যে নিজে দক্ষ এবং নিজে সফল এবং অনেক টাকা আয় করে এবং যার অনেক রেপুটেশন, সে কেন ট্রেনিং এর বিজনেস করে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা ইনকাম করতে আসবে? আবার সে আরেকজন কে সফল হবার মূলমন্ত্র দিতে পারলে সে নিজেই তো লক্ষ-লক্ষ টাকা আয় করার কথা।
এইসব ট্রেনিং সেন্টারের মালিক কিংবা ট্রেইনারদের ব্যাকগ্রাউন্ড খোঁজ করলে দেখবেন, তারা নিজেরাই অন্য ট্রেনিং সেন্টারের কোর্স করেছিল, নিজেরা যেহেতু ঐ কাজে দক্ষ হতে পারেন, সফল হতে পারেনি। তো কি করবে? যা তারা শিখেছে তা ই অন্যকে শিখিয়েই যদি টাকা আয় করা যায় তাহলে ত আর ট্রেনিং করার জন্য অর্থলোভী মানুষের তো আর দেশে অভাব নেই।
তাই একটু খেয়াল করলে দেখবেন যে , এসব ট্রেনিং সেন্টারে ফ্রিল্যান্সিং বলতে শুধু SEO কেই বুঝায়। কিন্তু এসব ট্রেনিং সেন্টার এ SEO এর ১০% ও শেখানো হয়না। কারণ ট্রেইনাররাই বেশিরভাগ সময় আগে থেকে ডাউনলোড করা কোর্সমেটেরিয়াল থেকে শেখায়, যা কিনা কয়েক বছর আগেই আউটডেটেডহঅয়ে পড়ে।কারণ এই খাতে প্রতিদিন ই নতুন আপডেট আসতে থাকে ।
আবার SEO এর কাজ পুরো মার্কেটের কাজের ১% এর চেয়ে কম। তার মানে আরো অনেক কাজ আছে যা অনেকেই জানেনা।
অন্যদিকে আবার এন্ড্রয়েড ডেভেলপমেন্ট, গেমিং ডেভেলপমেন্ট, থ্রিডি, অটোক্যাড, এনিমেশন, ডেটা সাইন্স এর মতো কাজ গুলোতে এদেশের খুব কম স্কিল্ড লোক আছে। অন্যদিকে এই খাতে কম্পিটিশন কম।
ফ্রিল্যান্সিং মোটেও খুব সহজ কোনো পেশা না, আবার খুব যে কঠিন সেটাও না। আপনাকে কষ্ট করতেই হবে, কষ্ট ছাড়া কেউ সফল হয় না। আর ফ্রিল্যান্সিং যদি এতটাই সহজ হতো তাহলে সবাই এটাই করত। অনেকেই আপনাকে ভুল ফাঁদে ফেলতে চাইবে, ভুল রাস্তা দেখিয়ে দেবে।
মনে রাখবেন যে ফ্রিল্যান্সিং কোনো এডাল্ট সাইট না, ক্যাপচা এন্ট্রি, ফেসবুকে ফেক লাইক, পিটিসি (Clicksense, Trafficmonsoon), এগুলো ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ নয়।
এগুলো হচ্ছে পিওর সাইবার ক্রাইম এবং অবৈধ। আসলে এগুলোর সাথে ফ্রিল্যান্সিং এর কোন যোগসূত্র নেই। বছর কয়েক আগেও বাংলাদেশে ফ্রিল্যান্সিং এর নামে এসব অবৈধ কাজ হচ্ছে বলে বিশ্বের নামকরা কয়েকটি সংবাদপত্রে প্রতিবেদন এসেছে।
ফ্রিল্যান্সিং যেমন এতটা সহজ নয় ঠিক তেমনি একজন সফল ফ্রিল্যান্সারের আয়ও খুব কম নয়। ফ্রিল্যান্সার দের লাইফ সম্পর্কে যদি বলতে যাই তাহলে বলতে হবে, একজন সফল ফ্রিল্যান্সারের পেছনের গল্প শুনলে হয়ত আপনি তাকে ‘লিজেন্ড’ খেতাব দিবেন। কারণ সফলতার পেছনের গল্প কখনও আনন্দের হয়না, অনেক স্ট্রাগল থাকে। রাতের পর রাত জেগে কোন কাজ শেখা, ইউটিউব এ টিউটোরিয়াল দেখা, বই পড়ার মত কাজ গুলো প্র্যাক্টিস করা, ধৈর্য ধরে, সময় নিয়ে টাকার আশা না করে কাজে দক্ষ হওয়ার জন্য মাসের পর মাস সময় দেয়া, এসব ই থাকে একজনের সফলতার পেছনে।
আগে জানুন এখানে কোন কোন ক্ষেত্র আছে, তারপর একটু ভাবুন যে আপনার দক্ষতা এবং ইন্টারেস্ট এর সাথে কোন ফ্রিল্যান্সিং এর স্কিল মিলে যায় কিনা।
তারপর অন্যরা কিভাবে তাদের প্রফাইল সাজিয়েছে সেটা দেখুন এবং তারা কেমন প্রাইস নিচ্ছে ক্লায়েন্ট এর কাছ থেকে সেসব ঘেটে দেখুন।
কারও কাছ থেকে পরামর্শ নিন কিভাবে এর মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিং ফিল্ডে নামা যায়।কারণ প্রথমেই ইনকাম করার সহজ পথ খুঁজবেন না।
চেষ্টা করতে থাকেন, ফেল করলে ভুল গুলো শুধরে আবার ট্রাই করেন। যে কাজএ আপনাকে একসেপ্ট করেনি, সে কাজ নিজে করুন, সেম্পল প্রজেক্ট হিসেবে প্র্যাক্টিসও হতে পারে, পোর্টফোলিও হবে।
ধৈর্য ধরে একটু একটু করে নিজেকে আরও দক্ষ বানানোর জন্যে নতুন নতুন বিষয় স্টাডি করুন।
যতটা সম্ভব ট্রেইনিং সেন্টার থেকে দূরে থাকুন এবং পারলে নিজে নিজে শেখার চেষ্টা করুন। যদি কোনো ট্রেনিং সেন্টারে যান তাহলে তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড সম্পর্কে জানুন।
যারা অল্প দিনে আপনাকে অনেক টাকা আয় করার কথা বলবে তাদের থেকে দূরে থাকুন।
নতুন উদ্যমে ফ্রিল্যান্সিং করবেন, কিন্তু সেটা ৩ বছরের বেশি না এবং এরপর উদ্যোক্তা হবার চেষ্টা করুন।
Detailsbd.com একটি মাল্টিনিশ বাংলা ব্লগ সাইট যেখানে মূলত ব্লগিং, ডিজিটাল মার্কেটিং, ব্যবসা, টেকনোলজি, ও পড়াশোনা রিলেটেড বিষয়বস্তু নিয়ে লেখা হয়। এটি শুরু করা হয় ২০১৮ সালের মে মাসের দিকে। এই সাইট টি আমার প্রথম ওয়েবসাইট তাই অনেক বাধা বিপত্তি সত্বেও আমি এই সাইটটিকে আমার কাছে রেখে দিয়েছি। আমার লেখা কোনো আর্টিকেল পড়ে যদি আপনাদের ভালো লাগে অথবা মন্দ লাগে তবে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।
ধন্যবাদ সবাইকে।