অনেকেই একটা দ্বিধা দন্দে ভোগেন যে ওয়েব ডিজাইন আর ডেভলপমেন্ট কি আলাদা জিনিস নাকি একই । অনেকে আবার বিভিন্ন কোচিং সেন্টারে ফ্রি কোর্স করতে গিয়ে বুঝতে পারেনা যে কি শিখতে এসেছে আর কি শিখছে। আজকে সেসব দ্বিধা দ্বন্দ নিয়েই আপনাদের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করব
আমরা সবাই প্রতিদিন নানারকম ওয়েবসাইট ভিজিট করে থাকি এবং অনেক কাজও করি। যেমন ফেসবুক, টুইটার, গুগল ইত্যাদি। এসব ওয়েবসাইট প্রত্যেকে ভিন্ন ভিন্ন রকম দেখতে ও ভিন্ন তাদের কাজও। এই যে একটি ওয়েবসাইটের ডিজাইন ও স্ট্রাকচার এটাকেই মূলত ওয়েব ডিজাইন বলা হয়। অল্প কথায় বলতে গেলে, একটি ওয়েবসাইট দেখতে কেমন হবে, কোথায় লোগো থাকবে, কোথায় কন্টেন্ট থাকবে, কোথায় মেনু থাকবে, এসবই হচ্ছে ওয়েব ডিজাইন।
শুরুতেই বলেছি যে প্রত্যেক ওয়েবসাইটের কাজ ভিন্ন ভিন্ন হয় এবং তারা ভিন্ন ভাবে কাজ করে। যেমন ফেসবুকে আমরা ছবি আপলোড করি, গুগলে আমরা কোনো টপিক নিয়ে সার্চ করি। এই যে একটি ওয়েবসাইট কি কাজ করবে ও কিভাবে কাজ করবে এসব হচ্ছে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট এর কাজ।
ওয়েব ডিজাইন আর ডেভেলপমেন্ট এর মধ্যে পার্থক্য হল যে,
ওয়েব সাইটের ডিজাইন বা লুক কেমন হবে সেটাই ওয়েব ডিজাইন। আর ওয়েবসাইট টি কিভাবে কাজ করবে সেটা ওয়েব ডেভেলপমেন্ট এর কাজ।
ওয়েব ডিজাইন করা হয় html, css, bootstrap দিয়ে, আর ওয়েব ডেভেলপমেন্ট করা হয় php, javascript, python, my sql, jquery, laravel দিয়ে।
ওয়েব ডিজাইন শেখাটা খুব কঠিন কিছু না, এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যেই আপনি ওয়েবসাইট ডিজাইন টা শিখে ফেলতে পারবেন। কিন্তু ওয়েব ডেভেলপমেন্ট শিখতে আপনার লেগে যাবে অন্তত ৫ মাসের বেশি। তবে আপনি যদি লেগে থাকেন তাহলে আরও আগেও শিখে ফেলতে পারেন।
দেখুন একটি ওয়েবসাইট বানাতে হলে আপনাকে যেমন এর ডিজাইনও শিখতে হবে তেমনি ডেভেলপমেন্টও শিখতে হবে। কিন্তু প্রশ্নটা হলো আপনি কোন ক্যারিয়ার গঠন করতে চান সেটা। অনেকে প্রফেশনাল ওয়েব ডিজাইনার হয়েও লাখ টাকা আয় করছেন আবার অনেকে ওনেকে ডেভলপার হয়েও টাকা ইনকাম করতে পারছেনা। এর প্রধান কারন হল লেগে না থাকা। আপনি যাই করুন না কেন আপনাকে সেটার পেছনে সময় দিতে হবে। তবে আমি বলব আপনি যদি একটি ভালো সম্মানজনক ক্যারিয়ার গঠন করতে চান তাহলে আপনি ওয়েব ডেভেলপমেন্ট শিখুন।
আজকাল অনেক আইটি ইন্সটিটিউট এ ফ্রি তে ওয়েব ডিজাইন শেখানো হয়। কিন্তু ডেভেলপমেন্ট ফ্রিতে তেমন একটা শেখানো হয় না কারন ডেভেলপমেন্ট এর মত এত বড় কোর্স কেউ ফ্রিতে আপনাকে দিতে চাইবে না।
কাজ ভিন্ন হলেও একজন ওয়েব ডেভলপার কে ক্লাইন্ট এর চাহিদা অনুযায়ী সবই দিতে হয়, যেমন ফ্রন্ট এন্ড এর ডিজাইন ও দেখাতে হয় আবার ব্যাক এন্ড এও কাজ করতে হয়।
আপনি কোনো কিছু শিখতে ঠিক কতদিন সময় লাগবে সেটা সম্পুর্ন আপনার উপর নির্ভর করে। তবে ওয়েব ডিজাইন শিখতে আপনার ১ থেকে ২ মাস সময় লাগতে পারে আর ওয়েব ডেভেলপমেন্ট শিখতে সময় লাগতে পারে ৪ থেকে ১ বছর।
বাংলাদেশে দক্ষ ওয়েব ডেভলপার এর চাহিদা প্রচুর কিন্তু সেরকম দক্ষ ডেভলপার পাওয়া মুশকিল। এই সেক্টরে যারা জব করছেন তাদের স্যালারি ৩০ হাজার থেকে শুরু করে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। এছাড়া ফ্রিল্যান্সিং করেও মাসিক লাখ টাকার উপর আয় করছেন অনেকেই।
তবে যতটা সহজ মনে হচ্ছে কাজটা ঠিক ততটা সহজ নয়, এই লাইনে দক্ষ হতে হতে আপনার লেগে যাবে অনেক সময়, কিন্তু মোটামুটি লেভেলের হয়েও আপনি ইনকাম শুরু করে দিতে পারবেন।
ওয়েব ডেভেলপমেন্ট এমন একটি সেক্টর যা আগামী ১০০ বছরেও চাহিদা থাকবে। এখন শিল্প বিপ্লবের যুগে সবাই তার প্রতিষ্ঠানের জন্য ওয়েবসাইট বানাচ্ছে। ধীরে ধীরে সব কিছু অনলাইনে চলে আসছে তাই চাহিদাও বাড়ছে।
কিন্তু অনেকেই জানিনা কিভাবে একটি ওয়েবসাইট বানাতে হয়। তার প্রধান কারন হলো,
আমরা জানি যে ওয়েবসাইট বানাতে হলে ডোমেইন কিনতে হয়, হোস্টিং কিনতে হয়, আবার HTML জানতে হয়। তারপর আবার কি সব জাভাস্ক্রিপ্ট, ওয়ার্ডপ্রেস এসব জানতে হয়। এতকিছু শোনার পর পুরো ব্যাপারটাই আমাদের কাছে জগা খিচুড়ির মত লাগতে থাকে, তাই এখনো অনেকেই এই ব্যাপারটা বোঝেন না সঠিকভাবে।
এবার মূল কথায় আসি। প্রথমেই বলে রাখি, আপনি এ পর্যন্ত যা কিছু জানেন সব ভুলে যান এবং আমি যেভাবে লিখেছি সেভাবে বুঝতে চেষ্টা করুন।
উত্তর হচ্ছে, আপনার মাথায় যদি ওলরেডি কোনো ওয়েবসাইট বানানোর প্ল্যানিং থাকে এবং আপনি যদি তার নামও ঠিক করে রাখেন তাহলে আপনাকে প্রথমেই সেই ওয়েবসাইট এর নাম অনুসারে একটি ডোমেইন (Domain) কিনে রাখতে হবে। কারন তা নাহলে আপনি কাজ শিখতে শিখতে সেই ডোমেইন অন্য কেউ কিনে ফেলতে পারে।
আর যদি তেমন কোনো তাড়াহুড়া না থাকে এবং সেভাবে কোনো প্ল্যানিং ও না থাকে তাহলে আপনি HTML শেখা শুরু করে দিতে পারেন। HTML না শিখেও আপনি ওয়েবসাইট বানাতে পারবেন এবং খুব সহজেই আপনার ওয়েবসাইট বানাতে পারবেন, সে বিষয়ে পরে বলছি। তবে HTML জানা থাকলে আপনার জন্য সুবিধা হবে এবং আপনি আরো এডভান্স লেভেলে ওয়েবসাইট বানাতে পারবেন।
সবাই এটা জানে যে HTML দিয়ে ওয়েবপেজ ডিজাইন করে, কিন্তু এর আসল কাজ হচ্ছে থিম বানানো। হ্যা, HTML দিয়ে মূলত ওয়েবসাইট এর জন্য থিম (theme) বানানো হয়।
আমরা আমাদের মোবাইলে যেমন বিভিন্ন রকম থিম (theme) অথবা launcher ব্যবহার করে থাকি এবং একেক থিমে মোবাইল একেক রকম দেখায়, তেমনি ওয়েবসাইটেও আমরা বিভিন্ন থিম ইন্সটল করি। একেক থিমে আমাদের ওয়েবসাইট একেক রকম হবে। এসব থিম হোস্টিং এ ইন্সটল করতে হয়।
থিম ইন্সটল করার পর ওয়েবসাইট কে ভালো করে সাজিয়ে গুছিয়ে নিতে হয় আর একেই বলে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট (Web development)।
এবার আসছি ডোমেইন, হোস্টিং আর HTML এর সেটাপ নিয়ে একটু বিস্তারিত বলতে।
ডোমেইন কেনার পর আপনাকে ডোমেইন এর কন্ট্রোল প্যানেল দেয়া হবে। এই কন্ট্রোল প্যানেল দিয়ে আপনি বিভিন্ন যায়গায় আপনার ডোমেইন বসাতে পারবেন (যেমনঃ হোস্টিং এ) এবং অন্য ডোমেইন অথবা সাবডোমেইন এর সাথে আপনার ডোমেইন কনভার্ট করতে পারবেন।
হোস্টিং(Hosting) কেনার পর আপনাকে হোস্টিং এরও কন্ট্রোল প্যানেল দেয়া হবে। হোস্টিং এর কন্ট্রোল প্যানেলে গিয়ে আপনি আপনার কেনা এক বা একাধিক ডোমেইন বসাতে পারবেন।
HTML থিমও এই কন্ট্রোল প্যানেলেই ইন্সটল করতে হবে এবং এখান থেকে এডিট করারও অপশন পাবেন। এছাড়া প্রয়োজনীয় সকল ফাইল আপনাকে হোস্টিং এই আপলোড করতে হবে।
বিভিন্ন ডোমেইন ও হোস্টিং প্রভাইডারের কাছথেকে আপনি ডোমেইন ও হোস্টিং কিনতে পারবেন পেপাল, ভিসা/মাস্টার কার্ডের মাধ্যমে। তবে দেশিও প্রভাইডারের কাছথেকে কিনলে বিকাশেও কিনতে পারবেন খুব সহজে।
এই হচ্ছে একটি ওয়েবসাইট বানানোর মূল তথ্য। এবার আপনাদের বলব কিভাবে HTML ছাড়া ওয়েবসাইট বানাতে হয়।
ওয়ার্ডপ্রেসের (WordPress) নাম তো অনেকেই শুনেছেন, যারা জানেন না ওয়ার্ডপ্রেস কি তাদের জন্য বলে রাখি- ওয়ার্ডপ্রেস হচ্ছে মূলত একটি ওয়েবসাইট, যেখানে HTML দিয়ে বানানো হাজার হাজার রেডিমেট থিম পাওয়া যায়। কিছু থিম আপনি ফ্রিতে ইন্সটল করতে পারবেন আর কিছু থিম আপনাকে ডলার দিয়ে কিনে নিতে হবে। এসব ওয়ার্ডপ্রেস থিম আরো অনেক ওয়েবসাইটেও বিক্রি হয়।
ওয়ার্ডপ্রেস থিম হোস্টিং এ ইন্সটল করে খুবই সহজে আপনারা দারুণ দারুণ সব ওয়েবসাইট বানিয়ে ফেলতে পারবেন।
এতক্ষনে আপনারা নিশ্চয়ই ক্লিয়ার ধারণা পেয়েগেছেন কিভাবে ওয়েবসাইট বানাতে হয় এবং কোথায় কি সেটাপ করতে হয়।
তবে ধারণা পাওয়ার পরেও আপনাকে কাজগুলো তো জানতে হবে ও শিখতে হবে। অনলাইনে বিভিন্ন কোর্স আছে এসবের জন্য, এছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও এসবের কোর্স করিয়ে থাকে।
তবে সবথেকে ভালো হবে যদি আপনি ইন্টারনেট ঘাটাঘাটি করে ফ্রি তে শেখেন। কারন এতে আপনি অন্যদের চেয়েও আরো এডভান্স ভাবে শিখতে পারবেন এবং আরো বেশি বেশি জানতে পারবেন। বাংলা ও হিন্দিতে এসবের অসংখ্য ভিডিও আছে, আর ইংরেজি ভালো বুঝলে তো কথাই নেই।
তাই কাজে লেগে পরুন আর আপনার মূল্যবান মতামত অবশ্যই নিচে দেবেন যদি লেখাটি আপনার কাজে লাগে আর আমরা চাই আরো ভালো করে আপনাদের বিভিন্ন বিষয়ে ডিটেইলস দিতে।
Detailsbd.com একটি মাল্টিনিশ বাংলা ব্লগ সাইট যেখানে মূলত ব্লগিং, ডিজিটাল মার্কেটিং, ব্যবসা, টেকনোলজি, ও পড়াশোনা রিলেটেড বিষয়বস্তু নিয়ে লেখা হয়। এটি শুরু করা হয় ২০১৮ সালের মে মাসের দিকে। এই সাইট টি আমার প্রথম ওয়েবসাইট তাই অনেক বাধা বিপত্তি সত্বেও আমি এই সাইটটিকে আমার কাছে রেখে দিয়েছি। আমার লেখা কোনো আর্টিকেল পড়ে যদি আপনাদের ভালো লাগে অথবা মন্দ লাগে তবে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।
ধন্যবাদ সবাইকে।